চসিক নির্বাচন সামনে রেখে তৎপর কিশোর গ্যাং

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

চলার পথে ধাক্কা লাগায় মো. ফয়সালকে (১৬) থাপ্পড় দেন হালিশহরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান লিটন (৫০)। অসাবধানতাবশত ধাক্কা লাগলেও দোষারোপ করে লিটনের থাপ্পড় দেয়ার বিষয়টাকে সহজভাবে নিতে পারেনি ফয়সাল। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নেয়ার। শেষ পর্যন্ত একা পেয়ে লিটনকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে খুন করে ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে। ১৯ অক্টোবর হালিশহর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে খুনের বিষয়টি।
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি নগরীর জামালখান এলাকায় কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী ছাত্র আদনান খুনের ঘটনার পর আসামিরাও একে একে ধরা পড়ে। ধরা পড়ে সেই খুনিদের আলোচিত রাজনৈতিক বড় ভাই রউফও। নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে আদনান খুনের ঘটনার পর। ওই ঘটনার পর সাঈদ ও আরমানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তখন সাঈদ ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের এবং আরমান চকবাজারের হলি ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। এরপর কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডাস্থল চিহ্নিত করা হয়। অভিযান চালানো হয় সেসব স্থানে। করা হয় থানা ভিত্তিক কিশোর সন্ত্রাসীদের তালিকা। একসময় সবকিছুই থেমে যায়। আসামিরাও জামিনে বের হয়ে পুনরায় জড়িয়ে পড়ে ছিনতাই চাঁদাবাজি সহ নানা অপরাধে। আগে তাদের আড্ডাস্থল ছিল গণিবেকারির মোড়। এখন তারা আড্ডা দেয় সেন্ট মেরীস স্কুলের পাশে। ছিনতাইয়ের একটি ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেয়ে নগরীতে ‘কিশোর গ্যাং’ অপরাধে জড়িত সাঈদ ও আরমানকে গ্রেপ্তারের পর নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংগুলো ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা-চাঁদাবাজিসহ এলাকার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের। আর দলীয় প্রভাবের কারণে আইনশৃক্সখলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। নগরীতে এ ধরনের ১৫ থেকে ২৫টি কিশোর গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। সিএমপি উপকমিশনার বিজয় বসাক এ প্রসঙ্গে আজাদীকে বলেন, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এরা। এদের কোনো রাজনৈতিক পদ পদবী নেই। কিন্তু ঠিকই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কথিত ‘ভাই’দের পক্ষ নিয়ে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কখনো মামলা দিয়ে চালান করছি, কখনো আবার অভিভাবকের জিম্মায় তাদের দিয়ে দিচ্ছি।
গত কয়েক মাসে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত শতাধিক কিশোর। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না কিশোর অপরাধীরা। বরং সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন গ্রুপ। গত ১২ জানুয়ারি রাতে নগরীর মোগলটুলী এলাকায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৮ নং ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষে কিশোর গ্যাংয়ের উপস্থিতি চোখে পড়ে। চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অলিগলিতে এখন বেশ তৎপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে তারা, স্লোগান দিচ্ছে, মাইকিং করছে, আবার প্রয়োজনে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ছে।
বর্তমানে নগরজুড়ে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের কিশোর গ্যাং। নিত্যনতুন কৌশলে চুরি-ছিনতাই ও খুনের ঘটনায় যারা ধরা পড়ছে তাদের মধ্যে কিশোর অপরাধীর সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য প্রকাশ্যে আসে। ওই ঘটনার পর ১৬টি থানায় কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করা হয়। ওই বছর ছোট বড় কিশোর গ্যাং এর ৫৫০ জন কিশোর তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া নগরীর ৩০০ টি স্পটকে এসব কিশোরের আড্ডাস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোচিংভিত্তিক, রাজনৈতিক, স্কুল-কলেজভিত্তিক, চাকুরিজীবী এই ধরণের অন্তত ১৫টি ক্যাটাগরির তালিকা করা হয়েছিল। পুলিশ কিশোর অপরাধী চক্রের (কিশোর গ্যাং) ৪৮ জন পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারের তালিকা করে। যার মধ্যে ১৭ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে, ৫ জন সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতা। ১৩ জনের দলীয় পদ-পদবী না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা প্রভাবশালী। বাকি ১১ জন পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় টপটেরর। সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ এ প্রসঙ্গে আজাদীকে বলেন, কিশোর অপরাধী এবং আড্ডাস্থলের যে তালিকা আগে করা হয়েছিল, সেটিকেই পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে নতুন তালিকা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী অভিযান চলছে, গ্যাং লিডাররা গ্রেপ্তার হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্রোহী যারাই হোক তাদের রক্ষা নেই, দলের সিদ্ধান্ত কঠিন
পরবর্তী নিবন্ধসহিংসতা রুখতে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি