চসিকের সিদ্ধান্তে নৌভাড়া বাড়ছে, মাঝিরা বলছেন ‘আমরা আর কত দিবো’?

মো. মহিউদ্দিন, কর্ণফুলী | সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৩৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সিদ্ধান্তে কর্ণফুলী নদীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাট—অভয়মিত্র, সদরঘাট ও বাংলাবাজারে—সাম্পান ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা নির্ধারণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইতিমধ্যে গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ থেকে চসিকের ইজারাকৃত ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাটে জনপ্রতি সাম্পান ভাড়া ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা আদায় শুরু করেছে ইজারাদাররা।

ফলে আশপাশের অন্যান্য ঘাটেও ভাড়া বৃদ্ধির চাপ তৈরি হয়েছে। যদিও অভয়মিত্র, সদরঘাট ও বাংলাবাজার ঘাটে বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশে ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, তবে খাস কালেকশন (সরকারি রাজস্ব আদায়) চালু রেখেছে চসিক।

সূত্র জানায়, এসব ঘাট দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় নিবন্ধিত পাটনিজীবী সাম্পান মাঝিদের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও রাজনৈতিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে খাস আদায় শুরু করেছে চসিক। এতে মাঝিদের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে।

প্রতিদিন চসিকের এস্টেট শাখার মনোনীত ব্যক্তিদের দিতে হয় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের খাস কালেকশন। পাশাপাশি, যাত্রী পারাপার ও নৌকা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত চসিক-মনোনীত লোকদেরও গড়ে দৈনিক ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় মাঝিদের। মাস শেষে এই খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এসব ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মাঝিরা।

সাম্পান চালকরা অভিযোগ করছেন, আগে যখন ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল মাঝিদের হাতে, তখন খরচও ছিল সীমিত এবং ভাড়াও নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমানে চসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ইন্ধনে ঘাট নিয়ন্ত্রণে অস্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে। এতে শুধু মাঝিরা নয়, যাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

চসিকের রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তার দাবি, নির্বাহী সিদ্ধান্তের ক্ষমতা পুরোপুরি মেয়রের হাতে। ফলে তিনি ইচ্ছামতো খাস আদায়কারীদের নিয়োগ দিতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মেয়রের আশপাশের কিছু বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ঘাট নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন এবং চসিককেও ভুল তথ্য দিচ্ছেন।

সাম্পান মাঝিরা বহুবার টাইগার পাড়স্থ অস্থায়ী মেয়র কার্যালয়ে গিয়েও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, ঘাটে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের কারণে তারা অতিরিক্ত আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েছেন, যার কারণে তারা বাধ্য হয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করতে চলেছেন।

চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ ও পুরনো নীতিমালা উপেক্ষা করে বাইরের লোকদের হাতে ঘাট তুলে দেওয়ায় পেশাদার মাঝিদের জীবন ও জীবিকায় চাপ পড়েছে।’

ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলী বলেন, ‘২০০৩ সালের পাটনিজীবী নীতিমালা উপেক্ষা করে আমাদের উচ্ছেদ করে ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের অধিকার হরণের শামিল।’

যদিও চসিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ইজারা শর্ত, জ্বালানি খরচ, শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় ২০ টাকা ভাড়া যৌক্তিক। তবে ভাড়াবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ উন্নত সেবা ও শৃঙ্খলার আশ্বাসে ভাড়া বৃদ্ধিকে গ্রহণযোগ্য মনে করলেও, বেশিরভাগ সাধারণ যাত্রীই এর বিরোধিতা করছেন।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি বিবেচনা করে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।’

অন্যদিকে, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে ঢাকায় সরকারি প্রশিক্ষণে আছেন, তাই এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে পারেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকালবৈশাখী ঝড়ে মীরসরাইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে ৪০ ঘণ্টা পর ভেসে উঠল নিখোঁজ নাবিকের লাশ