চলচ্চিত্র যখন পাঠের বিষয়

শৈবাল চৌধূরী | সোমবার , ৯ মে, ২০২২ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মস্কো ফিল্ম স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৯ সালে। অর্থাৎ ১৮৯৫ সালে সিনেমার আবিষ্কারের (সিনেমার জন্ম ১৮৮৯ সালে এবং জনসমক্ষে প্রথম প্রদর্শন ১৮৯৫ সালে) ২৪ বছরের মধ্যেই এই মাধ্যম নিয়ে শিক্ষা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯২৫ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম ফিল্ম সোসাইটি। এসব কর্মকান্ডের নেপথ্যের কারণ চলচ্চিত্র বিষয়ে পাঠদান, প্রশিক্ষণ এবং তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক চর্চা যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে একটি চলচ্চিত্র সারস্বত মহল। অনিবার্য ও প্রত্যাশিত ভাবেই দু’টি উদ্যোগই সফল হয়েছিল। এই স্কুলে পড়তে এসেছিলেন পুদভকিন, আইজেনস্টাইন, ভের্তভের মতো ডাকসাইটে চলচ্চিত্রকার যাদের হাতে গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্রের ব্যকরণ, প্রকরণ, আঙ্গিক এবং নির্মাণ পদ্ধতি। এই স্কুলে পড়াতেন লেভ কুলেশভের মতো চলচ্চিত্রও।

ক্রমশ এই চর্চা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিটিউট-এর পাশাপাশি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও চলচ্চিত্র নিয়মিত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়। চালু হয় চলচ্চিত্র বিভাগ, আমাদের উপমহাদেশে ১৯৬০ সালে ভারতের পুনেতে ফিল্ম ও টিভি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট ১৯৯৫ সালে। ধীরে ধীরে উপমহাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশর ঢাকায় একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি ফিল্ম ইন্সটিটিউট রয়েছে। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগে নিয়মিত শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকে।

তবে সবার পক্ষে ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয় না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে আগ্রহী যারা রয়েছে তাদের পক্ষে সঙ্গত নানা কারণে ইন্সটিটিউটে পড়াও সম্ভব হয়ে উঠে না।

ফিল্ম সোসাইটি বা চলচ্চিত্র সংসদগুলো একেবারে শুরু (১৯২৫) থেকে এক্ষেত্রে বিকল্প ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও। চট্টগ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে এ-চর্চা চলমান। তবে ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ ও পঠন ও পাঠনের ওপর জোর দিয়ে আসছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে চলচ্চিত্র কেন্দ্র এ-পর্যন্ত প্রায় তিরিশটি কোর্স ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে। সর্বশেষ কোর্সটি অনুষ্ঠিত হলো ৮ থেকে ২৩ এপ্রিল। এবারের কোর্সটি ছিল বেসিক ফিল্ম কোর্স। কোর্সটি পরিচালনা করেন শৈবাল চৌধূরী। এর আগে বেশ কয়েকটি কোর্স ও ওয়ার্কশপ তিনি পরিচালনা করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার বিভাগে ২০১৪ সাল থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষকতায় তিনি নিয়োজিত।

চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের নন্দন কাননের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বেসিক ফিল্ম কোর্সে সিনেমার শুরু থেকে হাল আমল পর্যন্ত বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিতভাবে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পর্যায়ে পাঠদান করা হয়। প্রতিদিন দুপুর তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঠদানের পর প্রাসঙ্গিক চলচ্চিত্রের ক্লিপিংস প্রদর্শন করা হয়। কোর্সটি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অগ্রজ চলচ্চিত্র কর্মী ও লেখক লোকপ্রিয় বড়ুয়া। সহকারী সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল এং কোর্সের আহবায়ক ছিলেন কেন্দ্রের একাডেমি সম্পাদক মোঃ ইমাম হোসেন। কোর্সে ১৮ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী এবং ছাত্র। তবে সকলের প্রকৃত পরিচয় তারা চলচ্চিত্রানুরাগী। এদের মধ্যে কয়েকজন নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতাও ছিলেন। ৮, ১৫,২২ ও ২৩ এই চারদিনের ৬ ঘন্টাব্যাপী দৈনিক ক্লাসে প্রশিক্ষণার্থীদের স্বতস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ পুরো কোর্সটিকে সফল করে তুলেছে। চলচ্চিত্রের ইতিহাস, চিত্রনাট্য রচনা, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, শব্দগ্রহণ ও চলচ্চিত্র নির্মাণ পদ্ধতি কোর্সের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২৩ এপ্রিল রাতে কোর্স সমন্বয়ক লায়ন লোকপ্রিয় বড়ুয়া এম জেএফের সঞ্চালনায় সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের আজীবন সদস্য, সমাজ ও সাংস্কৃতি সেবী লায়ন নাজমুল হুদা এমজেএফ। বক্তব্য রাখেন কোর্স পরিচালক শৈবাল চৌধূরী, কোর্স উপ সমন্বয়ক মোঃ কামাল ও আহবায়ক মোঃ ইমাম হোসেন। কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের সকলেই একে একে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তারা সবাই নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এরপর প্রধান অতিথি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র অর্পণ করেন। কোর্সের শেষে সত্যজিৎ রায়ের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘টু’ প্রদর্শন করা হয়। বেসিক ফিল্ম কোর্সটি উৎসর্গ করা হয় চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সদ্য প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম চৌধুরীর স্মৃতিতে।

ক্রমশ এই চর্চা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিটিউট-এর পাশাপাশি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও চলচ্চিত্র নিয়মিত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়। চালু হয় চলচ্চিত্র বিভাগ, আমাদের উপমহাদেশে ১৯৬০ সালে ভারতের পুনেতে ফিল্ম ও টিভি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট ১৯৯৫ সালে। ধীরে ধীরে উপমহাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশর ঢাকায় একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি ফিল্ম ইন্সটিটিউট রয়েছে। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগে নিয়মিত শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাহাজে ঈদ
পরবর্তী নিবন্ধসরাইপাড়ায় বস্ত্র বিতরণ