চমেক হাসপাতালে অস্থিরতা সৃষ্টির কুশীলবরা চিহ্নিত

তালিকা স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হলেই পদক্ষেপ নেবে দুদক

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নানান সময়ে অস্থিরতা সৃষ্টির কুশীলবদের চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে হাসপাতাল কর্মচারীদের মধ্যে প্রভাবশালী ও বিগত সময়ে অস্থিরতার সাথে জড়িত কর্মচারীদের তালিকাও প্রস্তুত করেছে দেশে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি। চমেক হাসপাতালের অভ্যন্তরে সরকারি জায়গায় কেন্টিনসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে টেন্ডার দিয়ে গত ২০ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে প্রভাবশালীদের চিহ্নিত করার কাজটি সেরে রেখেছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদকের অভিযানের সময় কোনো কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হলে যাতে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেই লক্ষ্যেই দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদকের বিশ্বস্ত সূত্র। জানা যায়, বিগত সময়ে নিজেদের দাবি দাওয়ার জন্য হাসপাতালের সেবা বন্ধ করে দিত তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সমিতির নামে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কেন্টিনগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাছাড়া হাসপাতাল অভ্যন্তরে গোয়াছি বাগান এলাকায় স্টাফদের অবৈধ বসতিগুলোর গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধসহ এসব বসতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক। চলতি সপ্তাহে সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তুতিও নিয়েছে দুদক। প্রাথমিক পর্যায়ে অবৈধভাবে পরিচালিত ৪টি কেন্টিন দখলমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক। এক্ষেত্রে কর্মচারীরা পূর্বের ন্যায় রোগীদের জিম্মি করে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে চিহ্নিত নেপথ্য কুশীলবরা রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছে দুদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএমএ নেতা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিএমএ’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল অভ্যন্তরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপও নিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সিন্ডিকেটগুলো বেশ শক্তিশালী। তারা পেশী শক্তি ব্যবহার করে হাসপাতালে তালা লাগিয়ে দেয়। রোগীদের সেবা বন্ধ করে দেয়। তারা তখন ডাক্তারদের কথাও শুনে না। এখন দুদক ব্যবস্থা নিলে হয়তো সুফল মিলতে পারে। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে সরকার থেকে বেতন নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর অসৎ সাহস রয়েছে অনেক কর্মচারীর। আবার সব কর্মচারী অনিয়মের সাথে জড়িত নয়। গুটি কয়েক প্রভাবশালী কর্মচারী নিজেদের সুবিধার্থে সাধারণ কর্মচারীদের ব্যবহার করে হাসপাতালকে জিম্মি করছে। এখন দুদক যদি তাদের চিহ্নিত করতে পারে তাহলে চমেক হাসপাতালে সার্বিক শৃংখলা ফিরতে পারে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতাল হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ২০১০ সালের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। সেটা করতে গিয়ে আমরা জেনেছি, চমেক হাসপাতাল সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাপটের কাছে হাসপাতাল পরিচালক থেকে শুরু করে ডাক্তার প্রফেসররা আরো বেশি অসহায়। যাঁরা যেই সময়ে ক্ষমতায় আসে, তাদের ছত্রছায়ায় হাসপাতালের কর্মচারী সমিতি প্রতিষ্ঠা করে কিছু কর্মচারী সাইনবোর্ড টাঙায়। তারা (ওইসব কর্মচারী) সবসময় সরকারি দল করে। তারা হেন কোনো অপরাধ, দুর্নীতি, অনিয়ম নেই, যে করে না। কিছু কিছু দুর্নীতির সাথে পুরো ওয়ার্ড কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা (কর্মচারী) নিজেরা জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডাক্তার মিনহাজ আমাকে জানিয়েছিলেন, তাদের (বেসরকারি ক্লিনিক) ক্লিনিকে ডেলিভারির জন্য ওষুধ লাগে ২৬শ’ টাকার, আর ওখানে (চমেক হাসপাতাল) লাগে ৮ হাজার টাকার। চমেক হাসপাতালে অসহায় নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন মানুষ সেবা নিতে যায়। কিন্তু প্রতিটি সেবার জন্য দালালদের টাকা দিতে হয়। রোগীদের টেস্ট হয় বাইরে। বিষয়টি টিআইবির রিপোর্টে এসেছিল। দুর্নীতি অনিয়ম সীমাহীন লুটপাটের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।’
এ আইনজীবী আরো বলেন, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সীমাহীন লুটপাটের কারণে আমরা আমজনতা অসহায় জিম্মি। ঠিকাদার, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সরবরাহ, ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী কেনাকাটা, খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ হয় না, যেখানে দুর্নীতি অনিয়ম হয় না। দুদক চাইলে হাসপাতালের অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য টিআইবি’র ওই রিপোর্ট সংগ্রহ করে নিতে পারে।’
জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই সরকারি এসব জায়গা ও আত্মসাৎকৃত সম্পদ উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। তারই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার হাসপাতাল অভ্যন্তরে কেন্টিন পরিচালনাকারী চারটি সমিতির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে দুদক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত দিনে কী হয়েছে, না হয়েছে সবই আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের তালিকা তৈরি রয়েছে। দুদক শুধু সরকারি স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করবে। তাই কেউ দুদকের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার সাহস দেখাবে না বলে মন্তব্য এ দুদক কর্মকর্তার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৯ মার্কেটে এখনো নিশ্চিত হয়নি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধজেনারেল হাসপাতালে নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড উদ্বোধন