চমেকে রাসায়নিকের সেই গোডাউন অপসারণের উদ্যোগ

৬০ বছর ধরে তালাবদ্ধ করণীয় জানতে ৫ দপ্তরে চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) পুরনো ফার্মাকোলজি ভবনে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা এসিড ও রাসায়নিকের মতো দাহ্য পদার্থের গোডাউনটি (স্টোর রুম) অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে চমেক প্রশাসন। স্টোর রুমটিতে কী কী ধরনের রাসায়নিক রয়েছে তার তালিকা চেয়ে ফার্মাকোলজি বিভাগে আগেই চিঠি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘ সময় ধরে তালাবদ্ধ থাকা রুমটিতে কী কী রয়েছে, তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফার্মকোলজি বিভাগ। জবাবে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর প্রদত্ত চিঠিতে ফার্মাকোলজি বিভাগ জানিয়েছে- স্টোর রুমটি ১৯৬০ সাল থেকে তালাবদ্ধ। পরবর্তীতে এ তালা আর কখনো খোলা হয়নি। আর ওই সময়ে (১৯৬০ সালের আগে) স্টোর রুমে কী কী ছিল, তার রেজিস্ট্রারেরও হদিস পাওয়া যায়নি। যার কারণে রুমটিতে কী কী রয়েছে, তার সঠিক তথ্য বিভাগে নেই।
স্টোর রুমে মজুদ থাকা রাসায়নিক (ক্যামিকেল) সংক্রান্ত তথ্য না পাওয়ায় রুমটির তালা খোলাটাও এখন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে কলেজ প্রশাসন। ফলে এ বিষয়ে করণীয় জানতে চেয়ে ৫টি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে চমেক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগকে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসান আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাসায়নিক (স্টোর রুমটি) অপসারণে একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ বলেন, প্রায় ৬০ বছর ধরে স্টোর রুমটি তালাবদ্ধ। এখন রুমটির তালা খোলাটাও সবাই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে। তাই এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে মতামত চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আমরা চিঠি দিয়েছি। একই সাথে অপসারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠনের জন্য এসব দপ্তর থেকে একজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে অনুরোধ করেছি। দপ্তরগুলো থেকে ফিডব্যাক পেলেই এ বিষয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে বলেও জানান চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসান।
উল্লেখ্য, কলেজের নতুন দশতলা একাডেমিক ভবনটির সাথে লাগোয়া পুরনো দুতলা একটি ভবন রয়েছে। চমেক হাসপাতালের সম্মুখ অংশে এ ভবনটি ফার্মাকোলজি ভবন নামেই পরিচিত। যা এখন জরাজীর্ণ ও অকেজো প্রায়। ভবনটির দুতলায় ফার্মাকোলজি বিভাগের স্টোর রুমে এসব দাহ্য পদার্থ তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অবশ্য, ফার্মাকোলজি বিভাগটি বেশ কয়বছর আগে সেখান থেকে নতুন একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে স্টোর রুমটি আগের মতোই তালাবদ্ধ রয়েছে। এই স্টোর রুমেই বছরের পর বছর ধরে এসব দাহ্য পদার্থ মজুদ আছে। যার কারণে স্টোর রুমটিকে রাসায়নিকের ‘বিপজ্জনক’ গোডাউন হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেখানে কী কী রাসায়নিক আছে এবং কী পরিমাণ আছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘হাসপাতালের সামনেই রাসায়নিকের গুদাম/চমেকের একটি ভবনে বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে না পারলেও স্টোর রুমটিতে এসিড, এলক্যালি ও রি-এজেন্টসহ বিভিন্ন রাসায়নিক (দাহ্য পদার্থ) থাকতে পারে বলে জানান চমেকের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। ওই প্রতিবেদনে ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মেডিকেল কলেজের জন্মলগ্নে ফার্মাকোলজি বিভাগের ব্যবহারিক ও ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারের জন্য এসব দাহ্য পদার্থ কেনা হয়ে থাকতে পারে। তখন কেনা হলেও এসব দাহ্য পদার্থ হয়তো ব্যবহার হয়নি। যার কারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এসব দাহ্য পদার্থ এখন বিপদজ্জনক অবস্থায় থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।