চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার দায়ে এমবিবিএস ও বিডিএসের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে গত বছর অক্টোবরে বহিষ্কার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৭ জন কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল গঠিত আপিল বোর্ডে শাস্তি কমানোর আবেদন করে। দীর্ঘ সময় আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের অতীতের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে এরমধ্যে ২২ জনের শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বাকি ২৫ জনের মধ্যে বিডিএস ৩৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং ২৪ জনকে একাডেমিক কার্যক্রমের ফেরার সুযোগ দেয়া হয়। তবে তারা কলেজের আবাসিক হোস্টেলে থাকতে পারবেন না। গত বুধবার চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত মতে–৭৫ জন শিক্ষার্থীকে ৬ মাস থেকে ২ বছরের বহিষ্কার করা হয়।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কারের মেয়াদ বাড়ানো ২২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে এমবিবিএস ৫৯ ব্যাচের আসেফ বিন তাকি, এমবিবিএস ৫৯ ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম জয় ও এমবিবিএস ৬০ ব্যাচের অভিজিৎ দাশকে। এছাড়া ৩ বছরের শাস্তি পেয়েছেন বিডিএস ৩০ ব্যাচের মো. হাবীবুল্লাহ হাবীব, এমবিবিএস ৬০ ব্যাচের মাহমুদুল হাসান, বিডিএস ৩০ ব্যাচের ইমতিয়াজ আলম, বিডিএস ৩০ ব্যাচের সাজেদুল ইসলাম হৃদয়, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের সৌরভ দেবনাথ, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের সাদ মোহাম্মদ গালিব, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের সাজু দাশ এবং এমবিবিএস ৬১ ব্যাচের এইচআর মাহফুজুর রহমান। ২ বছরের শাস্তি পেয়েছেন এমবিবিএস ৬০ ব্যাচের শামীম আহমেদ ভূঁইয়া, এমবিবিএস ৬০ ব্যাচের ফয়সাল আহমেদ, এমবিবিএস ৬১ ব্যাচের মো. সাইফ উল্লাহ, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের জাবেদুল ইসলাম, বিডিএস ৩০ ব্যাচের এসএম জিয়া উদ্দিন, বিডিএস ৩১ ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম জিসান, এমবিবিএস ৬০ ব্যাচের নাইমুল মোস্তফা আকাশ, এমবিবিএস ৬১ ব্যাচের সুমিত চক্রবর্তী, এমবিবিএস ৬১ ব্যাচের মাশফি জুনায়েদ ও এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের মো. এনামুল হাসান সীমান্ত। অপরদিকে ১ বছরের শাস্তি পেয়েছেন বিডিএস ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মাহতাব উদ্দিন রাফি।
অপরদিকে শাস্তি কমানো ২৪ শিক্ষার্থীরা হলেন–এমবিবিএস ৬০ ব্যাচের আরাফাত সিহাব, ৩৪ বিডিএস ব্যাচের শ্রেয়স্কর সাহা, এমবিবিএস ৬৪ ব্যাচের মো. মোস্তফা জামিল, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের শেখ শামীম হাসান, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের অগাস্টো দীপ নিলয়, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের মাহিম আহমেদ, এমবিবিএস ৬৫৮ ব্যাচের ফাতিন আহবাব ইশমাম, এমবিবিএস ৬৪ ব্যাচের মো. তাইফুল ইসলাম তামজেদ, এমবিবিএস ৬৪ ব্যাচের মো. শাহরিয়ার রহমান, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের শেখ রিমন হোসাইন, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের তাফহিমুল ইসলাম, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের সৌরেন বড়ুয়া, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের মো. মাহফুজুর রহমান, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের জাকি আল হাসান, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের রাহুল সুশীল, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের প্রীতম দে অনিক, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের রজত আচার্য্য, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের চয়ন দাশ অয়ন, এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের এইচএম আসহাব উদ্দিন, এমবিবিএস ৬১ ব্যাচের হাসিন শাওয়াদ রাব্বি, বিডিএস ৩২ ব্যাচের দেবজিৎ বিশ্বাস, বিডিএস ৩১ ব্যাচের মো. এহসানুল কবির রুমন, এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের দীপ্তেশ চক্রবর্তী ও এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচের মো. শায়খুল আলম খান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, গত বছরের ২৭ অক্টোবর চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত মতে–৭৫ জন শিক্ষার্থীকে ৬ মাস থেকে ২ বছরের বহিষ্কার করা হয়। এরমধ্যে ৪৭ জন শাস্তি কমানোর জন্য আবেদন করেন। এ ছাড়া কয়েকজন অভিযুক্তের শাস্তি কম হয়েছে দাবি করে ভুক্তভোগী বাদীরাও আবেদন করেন। একাডেমিক কাউন্সিলের আপিল বোর্ড শুনানি গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে ২৪ জনের শাস্তি কমানো হয়েছে। তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা নেই। তবে আবাসিক হোস্টেল সুবিধা পাবেন না। এছাড়া অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় একজনকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগে সরকারের পতনের পর কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে চমেক কর্তৃপক্ষ। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অবৈধভাবে কক্ষ দখল, অঙ্গীকার ভঙ্গসহ কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব শিক্ষার্থীর যথেচ্ছাচারী আচরণের কারণে কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসগুলোতে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও তারা আরও শিক্ষার্থী নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত আধিপত্য ও ব্যক্তিগত হিরোইজম প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়। কলেজ ক্যাম্পাস এবং ছাত্রাবাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও তারা সেটা অমান্য করে এ ধরনের কাজে লিপ্ত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ৭৫ শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং ১১ জনকে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়।