চবি প্রশাসনের লোকদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা দরকার

শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য ভর্তি পরীক্ষার আয়ের টাকা কোথায় যাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন

চবি প্রতিনিধি | বুধবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের করা সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। উপাচার্যের লিখিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করে কথা বলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে প্রফেসর আবদুল হক বলেন, যে সিন্ডিকেট আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলে, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ তারিখ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্বের ৩১ তারিখের সিন্ডিকেটের তারিখ দিয়ে। এভাবেই শিক্ষকদেরকে দমননিপীড়ন করে যাচ্ছে এই প্রশাসন। তিনি বলেন, যে সিন্ডিকেট এত পক্ষপাতদুষ্ট, যে সিন্ডিকেটে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের ১০ দিন পরে গিয়ে ১০ দিন আগের না হওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে, সেই সিন্ডিকেটের কাছে এই প্রশাসন আমাদের বিচার চাওয়ার কথা বলছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার টাকা নিয়ে সংসদে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির টাকা চবি উপাচার্য, শিক্ষক এবং একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়টিকে আইনের চরম লঙ্ঘন বলে জাতীয় সংসদে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু।

তবে অভিযোগটি পুরোপুরি সঠিক নয় দাবি করেছেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এ অভিযোগের কারণে টাকা ভাগাভাগির দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের ওপরেও এসে পড়েছে। অথচ এসবের সঙ্গে শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারেন। কেননা সাধারণ শিক্ষকরা আয়ব্যয়ের হিসাবও জানেন না, ভাগবাটোয়ারার হিসেব তো অনেক দূরের বিষয়।

তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ বলছে ভর্তি পরীক্ষার যে আয়, এর চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। আমরা বলেছি, যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে হল পরিদর্শনের যে সম্মানী দেওয়া হয় প্রয়োজনে সেটা আমরা নেব না। কিন্তু আয়ব্যয়ের হিসাবটা যে সভায় আপনারা নির্ধারণ করেন, সেখানে শিক্ষক সমিতির একজন সদস্যকে রাখুন। তাহলে শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা বাকিদের কাছে সঠিক তথ্যটা পৌঁছে দেব। কিন্তু তারা এতে রাজি হননি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক বলেন, উপাচার্য নিজের পরিদর্শন ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন। অথচ সাধারণ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় আয় হয়েছে ২১ থেকে ২৩ কোটি টাকা। আমরা হিসাব করে দেখলাম, এখানে ৭৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাহলে এ অর্থ কোথায় যাচ্ছে? এ টাকা কোন খাতে ব্যয় করছেন, সেটা যদি সবার সামনে তুলে না ধরেন, তাহলে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

আবদুল হক বলেন, ছাত্রলীগকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে দায়টা স্বীকার না করে এবং সেই সংগঠনটির নাম পর্যন্ত না নিয়ে উল্টো একবার সাধারণ ছাত্রদের ওপর, আরেকবার শিক্ষক সমিতির ওপর দায় চাপাচ্ছেন। আপনারা এ ধরনের নতজানু ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিতে থাকলে এ বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে এ কথা কেউ বলতে পারবে না। এ ধরনের বক্তব্য কেবল হাস্যকর নয়, বরং চরম অসংলগ্ন ও ভারসাম্যহীন, যার মধ্য দিয়ে তাদের প্রশাসনিক অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের সম্মানী নির্ধারণ ও আয়ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়াারি চট্টগ্রাম নগরে চারুকলা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক সমিতির এমন আন্দোলন লজ্জাজনক বলে আখ্যায়িত করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। শিক্ষক সমিতিকে আন্দোলন না করে তাদের দাবি সিন্ডিকেটের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকুশ এলেই মনে পড়ে…
পরবর্তী নিবন্ধশুক্রবার চট্টগ্রামের ১৭ গুণীকে একুশে পদক দিবে চসিক