চবির স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন অবদান রাখবে সুনীল অর্থনীতিতে

চলছে নির্মাণ কাজ

ইমাম ইমু | শনিবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস জানার জন্য বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নেই কোনো ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন বা ভূউপগ্রহ কেন্দ্র। এবার দেশে প্রথমবারের মতো ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সাথে চায়নার জাতীয় সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অব ওশানোগ্রাফির সাথে যৌথ উদ্যোগে এ স্টেশন স্থাপিত হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ গ্রাউন্ড স্টেশনটির নির্মাণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। এরপর থেকে স্টেশনটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পূর্বাভাসের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে এ সেটশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই স্টেশনটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমুদ্রের বিভিন্ন তথ্য বা প্যারামিটার যেমনসমুদ্রের পানির রং, তরঙ্গ, সাগরের স্তর, তাপমাত্রা ইত্যাদি সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ এবং সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ, বিশ্লেষণ করে সমুদ্র সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ, মৎস্য শিকার ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি এটি সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আগে সামুদ্রিক তথ্য সংগ্রহ, মৌসুমি ও জলবায়ু গবেষণা, জাতীয় নিরাপত্তা ও সমুদ্র গবেষণার জন্য ইন্ডিয়ান মেট্রলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি), ন্যাশনাল অ্যারোনটিঙ অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (নাসা) অন্যান্য উৎসের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এ ভূউপগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ সকল তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফি’র (এসআইও) কারিগরি ও যান্ত্রিক সহায়তায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের সাথে যৌথ উদ্যোগে এই ভূউপগ্রহ কেন্দ্রটি নির্মাণ হচ্ছে। প্রায় ৭০ কোটি টাকা বাজেটের এই প্রকল্পের প্রায় ৬০ কোটি টাকার কারিগরি ও যান্ত্রিক সহায়তা দিচ্ছে চীনের এই প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমি, লোকবল, নিরাপত্তা ও গবেষকসহ সকল ইনকাইন্ড সার্ভিস কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে স্টেশনটি পরিচালনা করবে।

এ বিষয়ে চবি মেরিন সায়েন্সস এন্ড ফিসারিজ অনুষদের ডিন, ভূউপগ্রহ কেন্দ্রের মূল উদ্যোক্তা ও কোঅর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত পাকিস্তান ও ভারতে এ ধরনের ভূউপগ্রহ কেন্দ্র থাকলেও বাংলাদেশে নেই। যার কারণে, আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তথ্য উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে মেরিটাইম বাউন্ডারি নির্ধারণের সমান্তরালে আমাদের নীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার জন্য দেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট। তবে সমুদ্র গবেষণায় এখনো পর্যন্ত সেরকম উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য আমরা পাইনি শুধু সমুদ্র পর্যবেক্ষণে আমাদের সক্ষমতা না থাকায়। মূলত ২০১৯ সালে চীনের অন্যতম ডিজিটাল সিটি হ্যাংঝুতে অবস্থিত এসআইওয়ের সাথে আমি এই স্টেশনটি স্থাপন নিয়ে কাজ শুরু করি। কেননা এসআইওসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চীন সমুদ্র গবেষণায় অনেক এগিয়ে, তাদের অনেকগুলো স্যাটেলাইট এবং ভূউপগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে যেগুলো ডেডিকেটেডলি সমুদ্র পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অংশ আধুনিক প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন মনিটরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ডেটা ও এঙপার্ট নিশ্চিত করা গেলে সমুদ্র অর্থনীতি উন্নয়নে বাংলাদেশে অনেক দূর এগিয়ে যাবে খুব অল্প সময়ে। এছাড়া স্যাটেলাইটের পাঠানো ইমেজ থেকে পাওয়া ডেটাগুলো প্রটোকল অনুযায়ী বিক্রি করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমৃদ্ধ হতে পারবে। আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা এবং শিক্ষকরা নতুন উদ্যমে কাজ করতে সক্ষম হবেন। আমরা এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যে টিম তৈরি করছি তারা এঙপার্ট হিসেবে দেশকে সেবা দিতে পারবে।

সম্প্রতি এ স্টেশনের নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছেন চবি উপউপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের আবহাওয়া ও সমুদ্র পূর্বাভাস খাত স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দেশের সমুদ্র অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁকখালী নদীর চরে একের পর এক উঠছে দালান
পরবর্তী নিবন্ধপথশিশুদের সঙ্গে দুই উপদেষ্টার মধ্যাহ্ন ভোজ