নগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে এবার আমরণ অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, ১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বেলা ১২টা থেকে একই জায়গায় এক দফা দাবিতে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে সমাধান না আসায় তারা অনশনে বসেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে রেখে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের প্রতি চলে আসছে চরম অবহেলা ও বৈষম্য। শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকা–খাওয়ার ব্যয়, যাতায়াতের কষ্ট, পর্যাপ্ত আবাসনের অনুপস্থিতি, নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, আধুনিক ল্যাব, লাইব্রেরি, খেলাধুলা, মানসিক বিকাশ বা সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো পরিবেশ। চারশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ২৫টি আসনের একটি হোস্টেল, আর নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসনই নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য শিক্ষার সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব গুলোতেও সংযুক্ত হয়ে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ নেই বললেই চলে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী স্বপ্নীল ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আজকে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম অগ্রগতির বিষয়ে। তারা জানিয়েছেন আমাদের চারুকলার প্রশাসন পুরো ব্যাপারটাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখানে তাদের ব্যর্থতার কথাই বলেছেন। আমরা এখন অনশনে যাচ্ছি। আমাদের দাবি সিন্ডিকেটের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারি না করা পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন করব।
অনশনরত মাসরুল আল ফাহিম বলেন, আর কোনো আশ্বাস নয়, এবার বাস্তব পদক্ষেপ চাই। চারুকলাকে তার প্রকৃত জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা আজ অনশনে বসেছি হয় মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, নয় অনশনে মৃত্যু। আমাদের দাবি, সহজ স্পষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়। এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবহেলার বিরুদ্ধে, এবং ভবিষ্যতের প্রতি এক নির্মম নিরবতার বিরুদ্ধে।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন, মো. শাহরিয়ার হাসান, খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, ইসরাত জাহান ইয়ামিন, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান, নুর ইকবাল সানি, তরিকুল ইসলাম মাহী ও মাহমুদুল ইসলাম মিনহাজ। এ ব্যাপারে উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন জানান, বিষয়টি সমাধানের প্রক্রিয়ায় আছে। আমারা মিটিংয়ে বসেছি। দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসবে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর চবি চারুকলা শিক্ষার্থীরা ২২ দাবিতে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। টানা ৮২ দিন আন্দোলনের পর ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও সাত দিনের আল্টিমেটাম শেষে ৩১ জানুয়ারি পুনরায় আন্দোলনের নামে। এরই মাঝে ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেয়।