চন্দনাইশ পৌরসভা কার্যালয়ে গত রোববার রাতে নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং ধোপাছড়িতে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর হামলা হয়েছে। এতে ৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া গত ৫ আগস্ট বোয়ালখালী ও রাউজান পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পৌরসভাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথি ও বিভিন্ন সম্পদ নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনগুলোও।
চন্দনাইশ : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চন্দনাইশ পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং ধোপাছড়ি ইউনিয়নের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় ও গভীর রাতে এসব ঘটনা ঘটে। এতে পৌরসভা কার্যালয়ের কম্পিউটার ভাঙচুর, মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করে দুর্বৃত্তরা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৬ জন সদস্য আহত হয়।
চন্দনাইশ পৌরসভার সচিব মোহাম্মদ মহসিন জানান, গত রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৭/৮ জনের একদল সশস্ত্র লোক পৌরসভার নৈশ প্রহরী মো. আবু তাহেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এ সময় পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। পরে মেয়রের রুমের জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে সিসি টিভির ডিভিআর নিয়ে যায়। টেবিলের ড্রয়ারের তালা ভেঙে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তছনছ করে। এছাড়াও পৌরসভার অফিস সহকারীর কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে কম্পিউটার ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে দেয়। এছাড়াও পৌর ডিজিটাল সেন্টারের তালা ভেঙে প্রবেশ করে জন্ম নিবন্ধন কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার ভাঙচুর করে রুমের বাইরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় নৈশ প্রহরী মো. আবু তাহের বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন।
একইদিন সন্ধ্যায় উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপথ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড শঙ্খেরকুল এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত নুর খালেকের পরিবারের উপর হামলা করে এলাকার একদল দুর্বৃত্ত। মুক্তিযোদ্ধা নুর খালেকের ছেলে মো. শামসুল ইসলাম জানান, এলাকার একদল চিহ্নিত লোক গত রবিবার সন্ধ্যায় তার ও তার পরিবারের উপর হামলা চালায়। বিগত সময়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধেই তার পরিবারের উপর হামলা হয়েছে বলে তিনি জানান। হামলায় তিনিসহ পরিবারের অপর ৫ জন সদস্য আহত হয়। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়।
মুক্তিযোদ্ধা নুর খালেকের পরিবারের উপর হামলার বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় উল্লেখ করে চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরু জানান, যারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে তাদের এবং তাদের পরিবারের উপর হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
বোয়ালখালী : বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, গত ৫ আগস্ট বোয়ালখালী পৌরসভা কার্যালয়ে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এতে পৌরসভার বিভিন্ন কক্ষে থাকা কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল এসিসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট হয়ে যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় কয়েক লাখ টাকা। গত বরিবার মহিলা কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে পৌরসভা কার্যালয় পরিদর্শন করেন উপজেলা বিএনপির নেতা কর্মীরা। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইছহাক চৌধুরী, মো. শওকত, মো. লোকমান, কাউন্সিলর মাহমুদুল হক, মহিলা কাউন্সিলর জোবাইদা বেগম, শাহনাজ পারভীন, হিসাব রক্ষক মো. মজিবুর রহমান, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানসহ স্থানীয়রা। এ সময় ইছহাক চৌধুরী বলেন, এসব আমাদের সম্পদ। দুর্বৃত্তরা আন্দোলনের সুযোগে এসব সম্পদ নষ্ট করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে আর কোন সম্পদ নষ্ট না হয় মত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সবাইকে। আর পৌরসভার সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আমাদের নেতৃবৃন্দরা আমার সাথে আছেন।
রাউজান : শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে রাউজানের কিছু দুষ্কৃতিকারী পৌরসভা ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে প্রায় সাত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট ও লুট করেছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র ত্রিপুরা। গতকাল পৌরসভার এসব ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যাজাই মারমা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদোয়ানুল ইসলাম। পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট বিকাল ৪টা থেকে দিবাগত রাতে দফায় দফায় হামলা ও লুটপাট করে দুষ্কৃতিকারীরা মেয়র, কাউন্সিলর, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলীর কক্ষের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। গুড়িয়ে দিয়েছে এসি, সিসি ক্যামেরা, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি। পোড়ানো হয়েছে আসবাবপত্র, বিল–ভাউচার, ক্যাশ বহি, চেক বহি, মূল্যবান দলিলপত্র ও জমা রাখা করের টাকা, মেয়রের ব্যক্তিগত গাড়ি, পৌরসভার কর্মচারীদের মোটরসাইকেল। ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে পৌরসভার আয় বর্ধক প্রকল্প প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই প্ল্যান্ট। নেদারল্যান্ড সরকারের অর্থসহায়তায় পরিচালিত ডেল্টা প্ল্যানের গুরুত্ব কাগজপত্র। ভাঙচুর চালানো হয়েছে কাউন্সিলর কাজী ইকবাল, বশির উদ্দিন খান, আলমগীর আলী ও জসিম উদ্দিন চৌধুরীর কার্যালয়েও।