চতুর্থ শিল্প বিপ্লব-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-শ্রমজীবী মানুষের ওপর তার অভিঘাত

তপন দত্ত | বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সারা বিশ্বে এখন চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। তার মানে ইতোপূর্বে বিশ্ব ৩টি শিল্প বিপ্লবের যুগ পার হয়ে এসেছে।

কৃষি সভ্যতার গর্ভেই প্রথম শিল্প বিপ্লবের জন্ম শুধুমাত্র কৃষির উপর নির্ভর করেই মানুষের প্রয়োজনীয় নিম্নতম চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না। মানব সমাজ ক্রমেই চাহিদা পূরণের জন্য শ্রম শক্তি দ্বারা চালানোর উপযোগী যন্ত্র আবিস্কার করে।

এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় গরু ঘোড়া দিয়ে টানানো হালচাষ, শ্রম শক্তি দিয়ে টানানো তাঁত ইত্যাদিরপ্রথম শিল্প বিপ্লবের প্রাথমিক উপাদান।

প্রাথমিক এই যন্ত্রগুলি আবিস্কার হলেও এগুলো ছিল শ্রম শক্তি দ্বারা চালিত। এই সময় থেকে শ্রম বিভাজনও শুরু হয়। তুলনামূলক উন্নত উৎপাদন যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে কিছু উদ্বৃত্ত উৎপাদন হতে থাকে। এই উদ্বৃত্ত উৎপাদন দখলে নিত সমাজের সর্দার, ক্ষমতাসীনেরা।

ফলে প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরী করা বা বিনিময় প্র্রথার মাধ্যমে প্রয়োজন মিটাতো। এই উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বনির্ভর অথচ দরিদ্র সরল সমাজ ভেঙ্গে ক্রমান্বয়ে জটিল সমাজ তৈরী হতে থাকে।

এই পর্যায়ে ইউরোপে বিদ্যুৎ, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কারের ফলে উৎপাদন যন্ত্রে পেশি শক্তির বদলে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার উৎপাদন ব্যবস্থাকে এক লাফে অনেকদূর এগিয়ে দেয়।

বিদ্যুৎ চালিত বয়ন শিল্পের মেশিন, গম ভাঙার মেশিন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মেশিন আবিস্কারের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। বেশি পণ্য উৎপাদন হতে থাকে। এক কথায় পেশি শক্তির বদলে বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে মেশিন চালানোকে ২য় শিল্প বিপ্লব নামে অভিহিত হতে থাকে।

এই পর্যায়ে সমাজ বিভাজন আরও জটিল হয়। মেশিনের মালিক একটি শ্রেণী, মেশিনের পিছনে শ্রম দেওয়া শ্রমজীবী মানুষ অন্য শ্রেণীতে পরিণত হয়। এটাই সমাজে শ্রেণী বিভাজন।

উৎপাদন যন্ত্রের প্রভূত উন্নতি, মানুষের নিরন্তর গবেষণার ফলে চার্লস ব্যাবেজ ১৮৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনের জন্য পরিকল্পনা তৈরী করেন। তিনি একজন ইংরেজ, গণিতবিদ এবং কম্পিউটারের উদ্ভাবক ছিলেন। প্রথম স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল কম্পিউটার কল্পনা করার কৃতিত্ব তার। বলা যায় এটাই ৩য় শিল্প বিপ্লবের যুগের শুরু। তবে একদম প্রাথমিক পর্যায়ের। তার আরও শতাধিক বছর পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি এলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়।

জন ম্যাকার্থি নামে একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রোগ্রামিং এর ভাষা শিল্পের জনক। তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামক পরিভাষা প্রচলন করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় এমন সব কাজ করানো যাবে যা মানুষ দ্বারা করানো সম্ভব নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা এখন বহুগুণ বেড়েছে। (সমুদ্রের তলদেশে খনিজ অনুসন্ধান ইত্যাদি)। আধুনিক কম্পিউটারের জনক এলান টিউরিং। তিনি মূলত কম্পিউটার মেমরির ধারণা দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্রষ্টা বলা হয়। এটাকে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে বলা হচ্ছে। ১৯৩৬ সালে তিনি একটি নিবন্ধে তাত্ত্বিক কম্পিউটারিং এর উৎস প্রমাণ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি একটি নতুন কম্পিউটার বিকাশ করেন যা মূল কম্পিউটারের স্মৃতিতে একটি প্রোগ্রাম সঞ্চয় করতে সক্ষম। এটির ক্ষমতা অনেক বেশি।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে চ্যাট জিপিটি। এটি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত কম্পিউটার। এর অ্যাপস হলো চ্যাট জি.পি.টি.। এটাকে বলা হচ্ছে ভাষা মডেল ব্যবহারকারীর সঙ্গে প্রশ্নকর্তার সরাসসি আলাপউত্তর পাওয়া যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন নিজেই নিজেকে শেখাচ্ছে। কোন মানুষের প্রয়োজন হচ্ছে না, এমনভাবে কাজ করছে তার স্রষ্টাও তার গতিবিধি ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছেনা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে নতুন বিপ্লব হচ্ছে রোবোট বা রোবোটিক্স। এই রোবোট মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজসাধ্য করে তুলেছে। ১০০ জন মানুষের কাজ কয়েকটি রোবোট প্রায় নির্ভুলভাবে সমাধা করছে। মানুষের বিকল্প হিসেবে সাধারণত রোবোট তৈরী হয়। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা যন্ত্রমানব। মানুষের বিকল্প হিসেবে সাধারণত এটি তৈরী করা হয়। যা মানুষের শ্রমসাধ্য বা দুঃসাধ্য কঠিন কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারে। রোবোট শব্দটি হলো একটি স্লাভ শব্দ। রাবোচি(শ্রমিক) থেকে রোবোট শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হলো শ্রমিক।

১৯৫৪ সালে কম্পিউটার প্রোগ্রামকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল রোবোট তৈরী করেন জর্জ চার্লস ড্যাবল। এর কাজ ছিল মূলত জিনিসপত্র উঠানো নামানো। ১৯৬৬ সালে আবিস্কার হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবোট। ২০০০ এর দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ আধুনিক শিল্প রোবোট তৈরী হয়।হংকং এর ডেভিড হ্যানসন উদ্ভাবিত রোবোট মানুষের মত কথা বলতে, চিন্তা করতে এবং বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে। ২০১৭ সালে সোফিয়া নামের এই রোবোট বাংলাদেশে ঘুরে গেছে।

এখন আমরা টিভিতে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখি। রেডিও টি.ভি অনলাইন কোন কিছুর আর প্রয়োজন হবে না। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত ড্রোন উড়িয়ে নীল আকাশকে টি.ভির পর্দা বানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার হবে।

রোবোটিক্স বিষয়ক আর্ন্তজাতিক ফেডারেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮২০১৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে পেশাদার কাজে সক্ষম রোবোটের বিক্রি ৩২% বেড়েছে। আমাজন, নাইকি, আলিবাবার মত বৃহৎ কোম্পানীর একেকটি গুদামে হাজার হাজার রোবোট কাজ করছে। হংকং এর একটি গুদামে নতুন একদল রোবেট কাজ শুরু করেছে যে গুলো স্বয়ং চালিত। ওগুলো যত বেশি কাজ করে তত বেশি কাজের অভিজ্ঞতা নিজের ভেতরে সঞ্চয় করে নিতে পারে। চীনের গিকপ্লাস নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই স্বচালিত রোবোট উদ্ভাবন করেছে। এদের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ দ্রুততর হচ্ছে। এতে করে কোম্পানীগুলোর জনবল ৭০% কমে গেছে। তাদের বিপুল অর্থ বেঁচে যাচ্ছে।(সূত্র রোবোট ও রোবোটিক্সডঃ মোঃ মোরশেদুল আলম, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়)। রোবোটগুলো (১০২০) জন মানুষের কাজ কয়েক ঘন্টার কাজ একাই করে দেয় মাত্র আধ ঘন্টায়। অর্থাৎ একজন মানুষ দৈনিক আট ঘন্টা কাজ করলে ১৬০ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হবে। মানুষের ১৬০ ঘন্টার কাজ মাত্র আধ ঘন্টায় করে দিচ্ছে একটি রোবোট।

উপোরোক্ত তথ্যগুলোর ভিত্তিতেএটা বলা যায় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আয়াস সাধ্য শ্রমকে সহজ করলেও এরকম জায়গায় যাচ্ছেভবিষ্যতে পৃথিবীতে কায়িক শ্রম, মানসিক শ্রম, বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম সব কিছুই রোবোটের হাতে চলে যাবে। আর রোবোট নিয়ন্ত্রণকারী, তৈয়ারকারী কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী উৎপাদন, সেবা সহ সব কাজ নিজেদের নিযন্ত্রণে নেবে। শুধু আমাদের এই পৃথিবী নয়, গোটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ড, মহাকাশ, ভিন্ন গ্রহ সব কিছুই তাদের দখলে নেবে। আগে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো তার শাসক গোষ্ঠী পৃথিবীর দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে তাদের স্বার্থে উপনিবেশ বানিয়েছে। এখন আর রাষ্ট্রের দরকার হবে না। রোবোট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও রোবোটিক্স গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ বিশ্বব্রম্মান্ড দখল করবে। বিশ্বের শাসন ব্যবস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। পার্লামেন্ট, নির্বাচন ভোটাধিকার কিছুই প্রয়োজন হবে না। এই সব প্রতিষ্ঠানগুলোই হবে বিশ্বের অধিশ্বর। কোটি কোটি শ্রমজীবি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, সম্পাদক চাকরি হারাবে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পাদকীয় লিখছে, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, রচনাসব কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত রোবোটই করবে। ফলে কোটি কোটি মানুষ বেকার হবে। কর্মহারা হবে। বুদ্ধিভিত্তিক পেশার লোকগুলো মেধাহীন লোকে পরিণত হবে। একজন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল সৃষ্টি হবে না। সম্প্রতি গুগলের ৩০ হাজার কর্মী ছাটাই করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর গত বছর ১৭,৫০০ সি..ও চাকুরী ছেড়েছে অথবা হারিয়েছে বিভিন্ন কারণে।

বর্তমান সময়ের বিশ্বখ্যাত বুদ্ধিজীবী দার্শনিক নোয়াম চমস্কি চ্যাট পিজিটিকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বর্ণনা করেছেন অত্যাধুনিক চৌর্যবৃত্তি এবং না শিখতে চাওয়ার রাস্তা। তিনি বলেছেন ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিউক্লিয়ার বোমার চাইতেও ভয়াবহ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এ আই বিশ্বের ৯৯% মানুষের মেধা, চিন্তাশক্তি, ব্রেইনকে অচল করার ব্যবস্থা। তিনি আর ও বলেছেন ছাত্ররা ক্লাসরুমে বসে অন্যদের সাথে চ্যাটিং করে। ক্লাসে মনোযোগ নেই। ক্লাসরুমে আইফোন নিষিদ্ধ করা উচিত। এই সব শিক্ষা ব্যবস্থা পতনের চিহ্ন। ’’

আবার অর্থনীতিবিদ রবার্ট গডন বলছেন-‘‘ইন্টারনেট মহান আবিস্কারগুলোর প্রতিবন্ধকতা উতরানোর পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের সস্তায় তথ্য ও বিনোদন লাভের সুযোগ করে দিলেও এর অধিকাংশ সেবাই বিদ্যমান কর্মকান্ডের বিকল্প মাত্র।’’

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক মনে করেন এ আই এমন এক পর্যায়ে যাবে যখন কোন চাকরীর প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। সম্প্রতি এক জরিপে মাস্কের কথার সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সি.এন.বি.সি। অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাজ কেড়ে নিবে কি না তা নিয়ে বিস্তর এক বিতর্ক আছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাকারী অ্যালফাবেট লিংক গুগল এবং আমাজানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘বর্ণ জেন্ডার সমতা নিয়ে সামাজিক পক্ষপাতকে ছড়িয়ে দেওয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) ইতোমধ্যে বিতর্কিত হচ্ছে’।

কিন্তু এত সমস্যা সৃষ্টিকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের নতুন উদ্ভাবন থেকে মানব সমাজ বা বিশ্ব কি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে বা এই নূতন উদ্ভাবন, রোবোট সব কিছু কি বন্ধ করা যাবেতাও মনে হয়না। বিশেষ করে জনসংখ্যার ভারে পীড়িত জনসংখ্যার দেশসমূহ বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ফলে কর্মহীনতার কারণে বেকারত্ব ইত্যাদি যে সমস্যার মধ্যে পড়বে তার সমাধান কি ভবিষ্যৎ ই বলবে।

মানুষ যখন কর্মহীন হবে তখন তার আহার বাসস্থান, চিকিৎসা সেবার সংস্থান কোথা থেকে হবে কে দেবে? রোবট সাম্রাজ্যের গুটি কয়েক অধিশ্বরের ভিক্ষার দান নিয়ে বাঁচতে হবে? এটা কি সম্ভব। আমার তো মনে হয় পৃথিবীর সেরা জীব মনুষ্য সমাজ এক নিরুদ্দেশ যাত্রার দিকে রওয়ানা হয়েছে।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বশেষ অবদান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নামক বিশ্ব সুন্দরী মানব সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেএই প্রশ্ন কি আমরা করবো না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানব সমাজকে নিরুদ্দেশ যাত্রায় সামিল করছে?

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সভাপতি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাহ