অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ/পদোন্নতি সংক্রান্ত বিধিমালা এবং শিক্ষাবোর্ডের মঞ্জুরিকৃত জনবল কাঠামোসহ (অর্গানোগ্রাম) বেশ কয়েকটি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. ফজলুল বারীর স্বাক্ষরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর ইস্যুকৃত এ চিঠিতে অনুসন্ধানের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে এসব তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুদকের চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তা সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।
যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে : আন্তঃবোর্ড/চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ/পদোন্নতি সংক্রান্ত বিধিমালা এবং শিক্ষাবোর্ডের মঞ্জুরিকৃত জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) বোর্ডের সহকারী প্রোগ্রামার আবুল হাসনাত মো. রাজু আহমেদ ও স্টেনোগ্রাফার মো. নাসির উদ্দিনসহ সম্প্রতি সেকশন অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়া বোর্ডের ১৪ জন কর্মচারীর নিয়োগপত্র, পদোন্নতি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র, তদসংশ্লিষ্ট পদোন্নতি কমিটি ও বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত/সুপারিশ, সংশ্লিষ্ট ফিডার পদের জেষ্ঠ্যতা তালিকা এবং তদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্রসহ ব্যক্তিগত নথি। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রফেসর শাহেদা ইসলামের কর্মকালীন জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবহৃত পুরাতন কাগজপত্রসমূহ টেন্ডার ও স্পট কোটেশনের মাধ্যমে বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থের হিসাব বিবরণী, সর্বশেষ অডিট প্রতিবেদন ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র। প্রসঙ্গত, শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রফেসর শাহেদা ইসলামের কর্মকালীন ১৪ জন কর্মচারীকে পদোন্নতি দেয়া হয়। সেকশান অফিসার/সমমানের ৮টি শূন্য পদ এবং অস্থায়ীভাবে সৃজন করা ৬টিসহ মোট ১৪টি পদে এ পদোন্নতি দেয় শিক্ষাবোর্ড। এর আগে অস্থায়ীভাবে সৃজন করা ৬টি পদ অনুমোদনে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম।
বোর্ড চেয়ারম্যানের চিঠির প্রেক্ষিতে ওই বছরের (২০১৯ সালের) ২৮ অক্টোবর অস্থায়ীভাবে সৃজন করা ৬টি পদের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ–সচিব ড. মো. মোকছেদ আলী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অনুমোদনের এ তথ্য জানানো হয়।
পরবর্তীতে পদোন্নতি বঞ্চিতদের কেউ নামে–বেনামে দুদকে অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা বোর্ড সংশ্লিষ্টদের। এদিকে, উপ–সচিবের নের্তৃত্বে একটি কমিটি বোর্ডের পুরনো কাগজপত্র বিক্রয়ের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে নিজের কর্মকালীন নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে এসব কাগজপত্র বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম। আর পদোন্নতির বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট পদোন্নতি কমিটির সুপারিশ এবং বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মেনে হয়েছে বলে জানান তিনি। এখন সামাজিকভাবে তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নামে–বেনামে এ ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রাক্তন এই চেয়ারম্যান বলেন, পুরো চাকরি জীবনে নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করিনি। যা করেছি নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই করেছি। আমার সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কিন্তু এখন নামে–বেনামে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে একটি পক্ষ সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কেউ কাজ করতে চাইবেন না বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রথম নারী হিসেবে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা প্রফেসর শাহেদা ইসলাম।
বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তীও বলছেন, প্রফেসর শাহেদা ইসলাম নিয়ম বর্হিভূত কিছু করেছেন বলে আমার মনে হয় না। কাগজপত্রগুলো আমি দেখেছি। তিনি অনিয়ম করেছেন, এমন কিছু পাইনি।
শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টদের দাবি, সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে বোর্ডের কেউ এ ধরনের অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারেন। এর আগে বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান আরো ৫/৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নামে–বেনামে অভিযোগ দেয়া হয় দুদকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়। তারা কাগজপত্র নিয়ে দুদকে হাজিরা দিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ বিষয়ে আর কিছু জানা যায়নি।
এর আগে বোর্ডের স্টেনোগ্রাফার নাসির উদ্দিন ও জালিয়াতির অভিযোগে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্ত থাকা মো. ওসমান গণির বিরুদ্ধেও অভিযোগ যায় দুদকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুজনের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। যদিও ওসমান ও নাসির একে অপরের বিরুদ্ধে বেনামে দুদকে এ অভিযোগ দেয় বলে শিক্ষা বোর্ডে প্রচার রয়েছে।
কেবল সামাজিকভাবে হেয় ও হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এ ধরনের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে দাবি করে বেনামে অভিযোগ দাতাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।