এসএসসি পরীক্ষায় ১৯ পরীক্ষার্থীর ৩৪টি উত্তরপত্রে নম্বর জালিয়াতির অভিযোগে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অভিযান চালিয়েছে দুদক। এসময় অভিযোগ বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। গতকাল নগরীর ষোলশহরে অবস্থিত চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, এবছরের এসএসসি পরীক্ষায় ১৯ পরীক্ষার্থীর ৩৪টি উত্তরপত্রে নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। আমাদের অভিযানে এখানে অনিয়ম পেয়েছি। অনিয়মের বিষয়ে আমাদের যেটা করণীয় সেটা আমরা কমিশনকে রিপোর্ট দেব। মূলত এখানে অনিয়মটা হয়েছে প্রোগ্রামার ও সহকারী প্রোগ্রামারের রুম থেকে। এখানে টেম্পারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আসা উত্তরপত্রগুলোতে মূল খাতা এবং টপ শিটে নম্বর ঠিক আছে। কিন্তু কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার সময় নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে সিস্টেম অ্যানালিস্ট নেই। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে অ্যাসিসটেন্ট অ্যানালিস্ট এখানে এসেছিলেন। এ অনিয়ম প্রথমে তার চোখে পড়ে। উনি বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান বরাবরে একটি পত্র দেন এবং তার প্রেক্ষিতে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ মাসের ১৮ তারিখ প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও উনারা (তদন্ত কমিটির সদস্য) সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। তার প্রেক্ষিতে আরও ১৫ কার্য দিবস সময় বাড়ানো হয়েছে। উনাদের বিভাগীয় তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে, আমরা আমাদের কাজ করছি।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত কয়েকজনের ‘একটি চক্র’ এ ফলাফল জালিয়াতিতে জড়িত বলে ধারণা করছেন জানিয়ে দুদক কর্মকর্তা ইমরান বলেন, যেসব উত্তরপত্রে নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো তারা দেখেছেন। যাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ, তাদের সাথেও কথা বলেছেন। পাশাপাশি কিছু কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই শেষে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দিব। এরপর কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ১০ জুলাই সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৮১ জন। ফল নিয়ে যাদের আপত্তি ছিল তাদের ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ৩২ হাজার ৩০৭ জন পরীক্ষার্থী তাদের ৭৮ হাজার ১৯২ টি উত্তরপত্র পুননিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেন। গত ১০ আগষ্ট উক্ত পুননিরীক্ষণের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে ফল পরিবর্তন হয় এক হাজার ৬৬৯ জন শিক্ষার্থীর। পুননিরীক্ষণে উত্তরপত্রের ফল পরিবর্তন হয় ১ হাজার ৭৪২টি। জিপিএ পরিবর্তন হয় ৬৪৬ জনের এবং ফেল থেকে পাস করেছে ৬৪ জন। সেইসঙ্গে নতুন করে জিপিএ ৫ পান আরও ৬৫ জন। প্রসঙ্গত, এর আগে নিজের ছেলের ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির একটি মামলায় গত ১৭ জুন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে কারাগারে পাঠানো হয়। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ নগরীর পাঁচলাইশ থানায় নারায়ণ চন্দ্র নাথসহ চারজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলাটি করেছিলেন।