চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কন্টেনার জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে

সময় ও রপ্তানি খরচ উভয়ই কমবে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

রপ্তানি খরচ কমানোসহ আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে চট্টগ্রামমোংলা রুটে কন্টেনার জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে একটি ভয়েজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ ১৪০ টিইইউএস খালি কন্টেনার নিয়ে এমভি এসএসিএল১ নামের জাহাজটি দ্বিতীয় ভয়েজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নোঙর তুলবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই রুটে দুইটি জাহাজ দিয়ে নিয়মিত কন্টেনার পরিবহন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামভিত্তিক শিপিং কোম্পানি দ্য সি গ্লোরি দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামমোংলা রুটে কন্টেনার জাহাজ পরিচালনা করছে। এরা চট্টগ্রাম থেকে খালি কন্টেনার মোংলায় নিয়ে যাবে এবং মোংলা থেকে রপ্তানি পণ্য ভর্তি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসবে। রপ্তানিআমদানি সুবিধা বৃদ্ধি ও বৃহত্তর খুলনার অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকার এই রুটে কন্টেনার পরিবহনকে বেশ ইতিবাচকভাবে দেখছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, মোংলা বন্দরে কন্টেনার ভর্তি পণ্য আমদানির পরিমাণ কম। যার ফলে বছরজুড়ে খালি কন্টেনারের ঘাটতি লেগে থাকে। চট্টগ্রাম থেকে খালি কন্টেনার পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়, যার ফলে সামগ্রিক কন্টেনার খরচ বেশি হয়। চট্টগ্রামমোংলা রুটে কন্টেনার জাহাজ চলাচল শুরু হলে, সময় ও রপ্তানি খরচ উভয়ই কমে যাবে।

মোংলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, এটি একটি লাভজনক বন্দর হিসেবে রয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বন্দরটির উল্লেখযোগ্য সমপ্রসারণ ও উন্নয়ন হচ্ছে। বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বৃদ্ধির ফলে এটির আয়ও বেড়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, নাব্যতা সমস্যা ও সীমিত ব্যবসায়িক সুযোগসুবিধার কারণে বন্দরটি তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারেনি। বর্তমানে বছরে ১২টি কন্টেনার জাহাজও এই বন্দরে ভিড়ে না। অর্থাৎ গড়ে মাসে একটিরও কম। ওই অঞ্চলের মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটসহ বিশাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

সি গ্লোরি’ এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য চট্টগ্রামমোংলা রুটের মধ্যে ছোট কন্টেনার জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। একটি জাহাজ ১৪০ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করতে পারে। তবে সি গ্লোরির কর্ণধার মোহাম্মদ জহির বলেন, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেছি। যদি কন্টেনার বেশি হয় তাহলে আমরা আরো বড় জাহাজ দিয়েই এই রুটে কন্টেনার পরিবহন করবো। তিনি বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলোচট্টগ্রাম থেকে খালি কন্টেনার পরিবহন এবং এরপর আন্তর্জাতিক রপ্তানির জন্য কার্গো ভর্তি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসা।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামমোংলা রুটের মধ্যে ১০০টি কন্টেনারের পরীক্ষামূলক চালান পরিবহন করা হয়েছিল। এর সাফল্যের পর, কোম্পানি মে মাসে নিয়মিত ও আনুষ্ঠানিক কন্টেনার পরিবহন শুরু করার পরিকল্পনা করছে। এই কন্টেইনারগুলো মোংলায় মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটের মতো জিনিসপত্র দিয়ে ভর্তি হবে এবং এরপর চট্টগ্রামের মাধ্যমে এগুলো রপ্তানি করা হবে। আজ একটি জাহাজ কন্টেনার নিয়ে মোংলার পথে রওয়ানা হবে বলেও সি গ্লোরি সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (খুলনা) চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম সংবাদ সংস্থা বাসসকে বলেন, ‘নাব্যতার সীমাবদ্ধতার কারণে বড় জাহাজগুলো সহজেই মোংলায় প্রবেশ করতে পারে না। তবে চট্টগ্রামের মাধ্যমে রপ্তানি সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে এবং কন্টেইনারের কোনও অভাব নেই। শিপিং এজেন্টদের চাহিদা অনুসারে চট্টগ্রামের মাধ্যমে পণ্য বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।’

বাসসএর সঙ্গে আলাপকালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দর বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল ও আশাব্যঞ্জক হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে, আশেপাশের অঞ্চলের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে।’

তিনি বলেন, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা এখন সন্তুষ্ট এবং আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সহজে পণ্য লোড ও আনলোড করার জন্য এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বন্দরে দেশীবিদেশী উভয় জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে, কারণ এখানে কোনও জাহাজ জট নেই।

তিনি বলেন, ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দর এলাকার উন্নয়ন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর, চট্টগ্রামমোংলা রুটে কার্যকর কন্টেনার পরিবহন দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিক্সন চৌধুরীর স্ত্রীর গুলশানের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ
পরবর্তী নিবন্ধখুলশীতে বাসার মালিকের স্বর্ণ চুরি, টাকাসহ গৃহকর্মী গ্রেপ্তার