খুন খারাবি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের ডাটাবেস তৈরি করছে পুলিশ। এবার অপরাধীদের সাথে নতুন করে অপরাধের ধরনসহ নানা তথ্য-উপাত্তও থাকছে এতে।
সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ বিভাগে সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের তালিকা রয়েছে। বিভিন্ন থানা বা ইউনিটের পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবেও পুলিশ এই তালিকা সংরক্ষণ করে। কিন্তু নতুন ডাটাবেসটি হবে তথ্যসমৃদ্ধ। এই বিশেষ উদ্যোগটি নিয়েছে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটি বড় ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের আওতাধীন এগারটি জেলায় অপরাধের এই ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। যাতে চোখের সামনে কোন জেলায় কতটি এবং কী ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে সংরক্ষণ করা হবে। তবে পুরানো ধাচের তালিকা সংরক্ষণের সাথে এবার নতুন করে অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ এবং কোন কোন এলাকায় কি ধরনের অপরাধ বাড়ছে, কোন সময় বাড়ছে, কেন বাড়ছে ইত্যাদি বিষয়েও তথ্য বিশ্লেষণ থাকবে ডাটাবেসে। তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে চট্টগ্রাম রেঞ্জের এগারটি জেলায় সর্বমোট ৬৪৫টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে মে মাসে। ওই মাসে ৯৭টি মার্ডার হয়। সবচেয়ে কম হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। ওই মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ৪৮টি। চট্টগ্রাম রেঞ্জে যৌতুকের জন্য খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৫১টি। অপহরণ ৪৫১টি। চট্টগ্রাম রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছে কক্সবাজারে। দশমাসে ১৫৮টি। এরমধ্যে মে মাসে হয়েছে সর্বোচ্চ ২৮টি, আগস্ট মাসে সর্বনিম্ন ৮টি। কক্সবাজারে দশমাসে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৫০টি। সর্বোচ্চ হয়েছে অক্টোবর মাসে ৩৯টি। কঙবাজার জেলায় ১০ মাসে ১১টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য কঙবাজারে সবচেয়ে বেশি হয়েছে মাদকের মামলা। ১০ মাসে ১ হাজার ৬২০টি মাদকের মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ৩৭২টি মাদকের মামলা হয়েছে গত জুলাই মাসে। চট্টগ্রাম জেলায় দশ মাসে খুন হয়েছে ৯৫টি। মে মাসেই খুন হয়েছে ২১টি। চট্টগ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৫০টি।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১টি জেলার অপরাধের ডাটাবেস সংরক্ষিত রাখা হবে ডিআইজি অফিসে। যেখানে এক ঝলকেই দেখা যাবে প্রতিটি জেলার অপরাধের ধরণসহ সব তথ্য উপাত্ত। চট্টগ্রামের কোন অঞ্চলে কি ধরনের অপরাধ বেশি হচ্ছে, কোন সময়ে বেশি হচ্ছে, কেন ঘটছে ইত্যাদি নানা তথ্য উপাত্ত। এসব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা একটি ডাটাবেস তৈরি করছি। এটি আসলে একটি পুরনো প্রক্রিয়া। তবে আদলটি নতুন। আগে আমরা শুধু মামলার রেকর্ড রাখতাম। কত মামলা হলো তার রেকর্ড। এখন আমরা এর সাথে আরো অনেক কিছু যুক্ত করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি ডাটাবেসে নানা তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ করবো। বিষয়টি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা অপরাধের মূলে যেতে চাই। গোড়া থেকে কাজ শুরু করলে বাড়তি সুফল মিলবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।