চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রিতে নয় ছয়, দুদকের অভিযান

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ১৫ মে, ২০২৪ at ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ভান্ডার শাখায় কম মূল্যে স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রি করে দেওয়ার দুদকের অভিযানে ৫ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা অনিয়ম ধরা পড়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের ভান্ডার শাখায় এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক চট্টগ্রাম-১। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক।

অভিযান চলাকালে ভান্ডার শাখার ৩১, ৩২, ৫৮, ৫৯, ও ৬০ নম্বর লটে লোহার স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য মালামাল বিক্রির কাগজ, স্টক রেজিস্ট্রার, মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার এবং স্টক করা মালামাল সরেজমিন পরিদর্শন করে দুদক। পরিদর্শনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেন দলের এক সদস্য।

বন্দরের ভান্ডার শাখা সূত্রে জানা যায়- গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ডাকা নিলামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ৩১, ৩২, ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর পাঁচটি লটে স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়। এরমধ্যে ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।৫৮ নম্বর লটে ৫০ টন বা ৫০ হাজার কেজি স্ক্র্যাপ দেখানো হয়। এ লটে রয়েছে-জাহাজ ও পন্টুনের পুরাতন প্রেইট, অ্যাঙ্গেল, গার্ডার ও অকেজো মালামাল। ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা দাম দেখানো হয়। একইভাবে ৬০ নম্বর লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ একই দেখানো হয়। মালামালও একই ধরনের। ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা দাম ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে এ দুই লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ প্রায় ৭৫০ টন।

কার্যাদেশ পাওয়ার পর মেসার্স আল-আমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক আল আমিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীর কাছে মালামাল বিক্রির চেষ্টা করেন। স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী আলমগীরকে তিনি ৫৮ ও ৬০ নম্বর লটের স্ক্র্যাপগুলো দেখান।

সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক তিনি জানান, ৫৮ নম্বর লটে ১৫০ টন ও ৬০ নম্বর লটে ৬০০ টনের কার্যাদেশ পাওয়া গেছে। প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৬০ হাজার টাকা দরে আলমগীর কিনে নিতে চান। এজন্য আল আমিনকে তিনি কার্যাদেশ দেখাতে বলেন। তবে আল-আমিন দুই লটে মাত্র ১০০ টন স্ক্র্যাপের বৈধ কাগজ দেখাতে পারেন। তাই স্ক্র্যাপ নিতে আলমগীর অস্বীকার করেন। এরপর এ খবর বাইরে প্রকাশ পায়।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী-চট্টগ্রামের সীমা স্টিল মিলের কাছে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় স্ক্র্যাপগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন আল-আমিন। এ নিয়ে বন্দরজুড়ে তোলপাড় চলছে। একইভাবে ১৬ জানুয়ারি মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্সকে ৩১, ৩২ ও ৫৯ নম্বর লটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩১ নম্বর লটের মালামালের দাম ২ লাখ ২৭ হাজার ৯০০ টাকা ধরা হয়। ৩২ নম্বর লটের ৭ হাজার ১১৬ কেজি স্ক্র্যাপের দাম ৩৭ হাজার ৭০০ টাকা ধরা হয়। ৫৯ নম্বর লটের স্ক্র্যাপের পরিমাণ ৯৫ টন দেখানো হয়।

অথচ এ লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ ৩৫০ টনের বেশি। ইব্রাহিম নিজেই স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী হওয়ায় অন্যের কাছে মালামাল বিক্রি করেননি। চট্টগ্রাম বন্দরের ভান্ডার শাখার একজন কর্মকর্তা জানান-৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর লটের স্ক্র্যাপের পরিমাণ ১ হাজার ১০০ টনের বেশি। অথচ মাত্র ১৯৫ টন দেখানো হয়েছে। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক স্ক্র্যাপগুলো লুটপাট করেছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ভান্ডার শাখার ৭ কোটি টাকার লোহার স্ক্র্যাপ অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মাত্র ১ কোটি ২১ লাখ টাকা বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করা হয়েছে।

তিনি জানান, ভান্ডার শাখার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাইকালে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার আদায়ে ঘণ্টাধ্বন্লি
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে আধাবেলা সড়ক অবরোধ চলছে