২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর বলতে গেলে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। এরপর ২০১৫ আর ২০১৯ সালে নির্বাচন হয়নি। ২০১৯ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সেটা ছিল একরকম এক তরফা। কারন দুটি পদে নির্বাচন হলেও সেখানে প্রতিপক্ষ বলতে তেমন শক্ত কেউ ছিলনা। তাই বলতে হবে প্রায় একযুগ পর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সবচাইতে ধনী জেলা ক্রীড়া সংস্থাটিতে। আর এবারের নির্বাচনের যে উম্মাদনা আর উসবের আমেজ, তা আগে কখনোই দেখা যায়নি। মোট ২৩টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭ জন। ব্যানার, ফেস্টুন আর প্লেকার্ডে ভরে গেছে স্টেডিয়াম এলাকা। স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই অন্যরকম আবহ পরিলক্ষিত হবে। এ যেন নতুন কোন স্টেডিয়াম। চির চেনা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের এ যেন ভিন্ন এক রূপ। তবে এসব উত্তেজনা, উম্মাদনা আর উৎসবের যবনিকা ঘটবে আজ। কারণ আজ যে নির্ধারিত হবে আগামী চার বছরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন নেতৃত্ব। গত দুই নির্বাচনের মত এবারেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গত তিনবারের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। আর তার সাথে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাহী সদস্য সংরক্ষিত (মহিলা) দুইজন রেখা আলম চৌধুরী এবং রেজিয়া বেগম ছবি। এখন ২৩ পদের জন্য লড়বেন ৪৭ জন প্রার্থী। যেখানে সহ সভাপতির ৪টি পদের জন্য লড়বেন ৯ জন। আগের দিন পর্যন্ত এই দশজন প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আদালতের রায়ের ফলে সহ সভাপতি পদে দিদারুল আলম চৌধুরীর নির্বাচনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই পদে এখন রয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, এ কে এম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, তাহের উল আলম চৌধুরী স্বপন, মকসুদুর রহমান বুলবুল, মফিজুর রহমান, এডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, শাহজাদা আলম, সৈয়দ আবুল বশর এবং মোঃ হাফিজুর রহমান। অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদকের একটি পদের জন্য প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন এস এম শহীদুল ইসলাম, মোঃ মশিউর রহমান চৌধুরী এবং সৈয়দ সাহাবুদ্দিন শামীম। যুগ্ম সম্পাদকের দুটি পদের জন্য প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ সরোয়ার আলম চৌধুরী মনি। কোষাধ্যক্ষ একটি পদে প্রার্থী দুজন। তারা হলেন আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল এবং শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। নির্বাহি সদস্যের ১৩ টি পদের জন্য প্রার্থী রয়েছেন ২৭ জন। তারা হলেন প্রবীন কুমার ঘোষ, সাইফুল আলম খান, সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর, এ এস এম ইকবাল মোরশেদ, আখতারুজ্জামান, আলমগীর পারভেজ, মোহাম্মদ দিদারুল আলম, অনুপ বিশ্বাস, হারুন আল রশিদ, এ এস এম সাইফুদ্দিন চৌধুরী, সাহেলা আবেদীন রীমা, ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন, শওকত হোসাইন, রাশেদুর রহমান মিলন, নাসির মিয়া, রায়হান উদ্দিন রুবেল, জহির আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, মোঃ মুজিবুর রহমান, এ কে এম আবদুল হান্নান আকবর, গোলাম মহিউদ্দিন হাসান, কল্লোল দাশ, দিদারুল আলম মাসুম, সুমন দে, এনামুল হক, হাসান মুরাদ বিপ্লব। উপজেলার সংরক্ষিত দুটি সদস্য পদের জন্য নির্বাচন করছেন তিনজন। তারা হলেন প্রদীপ কুমার ভট্টচার্য্য, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। গত কয়দিন প্রার্থীরা দারুণ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। যার প্রতিফলন ঘটবে আজ। সকাল ৮ টা থেকে বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। এরপর হবে গননা। নির্বাচন কমিশনার তানভীর আল নাসিফ জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচলনার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি। সুষ্ঠু, সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিতে চান তিনি। আর সে জন্য ভোটের বুথে সব ধরনের মোবাইল কিংবা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস নিষিদ্ধ করেছেন। মোট ২৫২ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যাদের ভোটে নির্বাচিত হবে আগামী চার বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। এবারের নির্বাচনে অভিজ্ঞরা যেমন আছেন তেমনি আছেন তরুণরাও। বিশেষ করে নির্বাহী সদস্য পদে বেশিরভাগ তরুণরাই নির্বাচন করছেন। সাথে অভিজ্ঞরাতো রয়েছেই। তাই তরুণ ভোটার এবং প্রার্থীদের প্রত্যাশা সবাই স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবেনা। সংস্থার যিনি সাধারণ সম্পাদক তার প্রতি প্রার্থী এবং ভোটার সবার একটাই চাওয়া তিনি যেন কোন কিছু চাপিয়ে না দেন। কারণ গতকাল থেকে এ ধরনের গুজব শুরু হয়ে গেছে। কারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়া একটি পক্ষ বরাবরের মত এবারেও চাইছে সাধারণ সম্পাদকের কাধে ভর করে বৈতরণী পার হতে। আর এমনটি হলে গনতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন কাউন্সিলররা। নিজেদের যোগ্যতা যাচাই এর একটি সুযোগ দেওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন কাউন্সিলরা। তাই সবার প্রত্যাশা একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং সৌহার্দপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ পাবে কাউন্সিলররা। যারা আগামী চার বছরে এগিয়ে নিয়ে যাবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনকে।