চট্টগ্রাম কারাগারে দেয়াল ভাঙার চেষ্টা কয়েদিদের বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ

পরে সব গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিক্ষোভ করেছেন কয়েদিরা। কারাগারের ভেতর সাঙ্গু ভবনের বারান্দার দেয়াল ভাঙারও চেষ্টা করেন তারা। বন্দীরা কারাগারের কর্মীদেরও জিম্মি করার চেষ্টা করেন। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন কারাক্ষীরা। এসময় কয়েকজন বন্দী ও কারারক্ষী আহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে উঠেন সবাই। গতকাল শুক্রবার বাদে জুমা এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে কারাগারের ভেতর গোলাগুলির শব্দ শুনে বাইরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কারাবন্দীদের অনেকের স্বজনও ছুটে আসে। খবর পেয়ে দ্রুত ছুৃটে আসে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরে কারাগারের প্রধান গেটসহ কারাগারের সব গেট নিয়ন্ত্রণে নেন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আজাদীকে বলেন, দেশের অন্যান্য কারাগারে বিদ্রোহের চেষ্টা হয়েছে। সেটার খবর পেয়ে চট্টগ্রামেও কয়েদিরা বিদ্রোহের চেষ্টা করেন। কারাগারের স্টাফদের জিম্মি করার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠি ব্যবহার করা হয়। ফাঁকা গুলি করা হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। কোনো বন্দী এবং কারারক্ষী মারা যায়নি। কয়েকজন কারারক্ষী এবং বন্দী আহত হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় সবাই সেরে উঠে।

তিনি বলেন, ঘটনার সাথে সাথে সেনাবাহিনীর দুটো গাড়ি আসে। সবসময় একটি গাড়ি থাকলে ভালো হত। সাঙ্গু ভবন ভাঙার চেষ্টা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ভবনটার একটি বারান্দা আছে। ওটা ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাঙতে পারেনি। এর আগে বিকেল ৩টার দিকে এ কারা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, জুমার নামাজের পর কারাগার থেকে বের হয়ে যাবার জন্য বিক্ষোভ শুরু করে। পাগলা ঘণ্টা বাজানোর পর কারারক্ষীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। গতরাতেও পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে আজাদীকে জানান তিনি।

এদিকে কারারক্ষী এবং কারাগারের বাইরে উৎসুক লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পৌনে দুইটার দিকে কারাগারের ভেতরে বন্দীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর পাগলা ঘণ্টা বাজানো হয়। উৎসুক লোকজন জানান, তারা বেলা ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান।

মো. রনি এক কিশোর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মাঠে খেলার জন্য এসেছিলাম। হঠাৎ কারাগারের ভিতরে আওয়াজ ও গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। পরে রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এক কারারক্ষী সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্ররা অনেকেই জামিনে বের হয়েছেন। এ সুযোগে অন্য বন্দীরা বের হওয়ার উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। আমরা সেটাকে প্রতিহত করেছি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

জানা গেছে, নগরের লালদীঘি পাড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার বন্দী রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জনের মতো জঙ্গি, নারীসহ দেড়শ জনের মতো কুকিচিন সদস্য এবং শতাধিক মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি আছে বলে এক কারারক্ষী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সরকার পরিবর্তনের খবর পাওয়ার পর বিকেলে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলার চেষ্টা করেন উৎসুক লোকজন। প্রধান ফটকের বাইরে হাজারো মানুষ অবস্থান নিয়ে কারাগারে হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় কারাগারের ভেতর থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে হামলা থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন কারারক্ষীরা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজাম নামে একজনের মৃত্যু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড় দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধসীমিত পরিসরে সিএমপির ১১ থানার কার্যক্রম শুরু