চট্টগ্রামে ৮৮ হাজার মানুষের দীর্ঘশ্বাস

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট ২০ মাস ধরে বন্ধ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১০ মার্চ, ২০২১ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতার কারণে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) ২০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট। অস্থায়ী সনদ দিয়ে চলছে নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও পুরনো নবায়নকৃত সকলে। এর ফলে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে চট্টগ্রামের প্রায় ৮৮ হাজার মানুষ। তবে বিআরটিএ বলছে, ফেব্রুয়ারি থেকে চার জেলায় পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি মাস থেকে চট্টগ্রামেও প্রিন্ট কার্যক্রম শুরু হবে। চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে সার্ভার স্থাপনসহ কারিগরি কার্যক্রম শুরু করেছে দায়িত্ব পাওয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তির তিন বছরের মধ্যে সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টাইগার আইটির সাথে জটিলতা তৈরি হয় বিআরটিএর।
এদিকে নতুন স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর জন্য ২০১৯ সালের শুরু থেকে নতুন করে ঠিকাদার (ভেন্ডর) নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে বিআরটিএ। সেই সময় অভিযোগ ছিল, একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে কয়েক দফা টেন্ডার কার্যক্রমের তারিখ পেছানোর কারণে ঠিকাদার নিয়োগ বিলম্বিত হওয়ায় সারা দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট কার্যক্রম থমকে গেছে। স্মার্ট কার্র্ড সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিআরটিএ। এতে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়নের জন্য আবেদন করা লোকজনের ভোগান্তি বেড়েছে। প্রায় ২০ মাস ধরে বন্ধ থাকায় মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও মিলছে না লাইসেন্স।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৮৮ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো নবায়ন রয়েছে অর্ধেকের মতো। এই তালিকায় প্রতি সপ্তাহে আরো হাজারের মতো যুক্ত হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিআরটিএর নির্ধারিত পরীক্ষায় পাস করে সপ্তাহে কমপক্ষে ৫শ জন অস্থায়ী লাইসেন্স পেলেও প্রিন্টিং জটিলতায় স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে তাদেরকে মাসের পর মাস বিআরটিএতে ধরনা দিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে মহানগর ও জেলায় মিলে এখন ৮৮ হাজার লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৭-২০ মাস ধরে কোনো লাইসেন্স প্রিন্ট হচ্ছে না। শুনেছি আগামী মাস থেকে প্রিন্ট শুরু হবে। তবে নিশ্চয়তা পাচ্ছি না।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং করার জন্য আগে থেকে টাইগার আইটির সাথে বিআরটিএর চুক্তি ছিল। ইতোমধ্যে তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা চলছিল। এখন সে জটিলতা কেটেছে। গত ২৯ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে নতুন করে চুক্তি হয়েছে। তারা কার্যক্রম শুরু করেছে।
বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. ইব্রাহীম খলিল আজাদীকে বলেন, ইতোমধ্যে নতুন ভেন্ডর মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় পাইলট কার্যক্রম শুরু করেছে। দ্রুত বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাটা সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হবে।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. শহীদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে কারিগরি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে ডিজিটাল লাইসেন্সের ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম শুরু করতে পারব। তবে প্রিন্ট হবে ঢাকা থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়া ও চন্দনাইশ গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ৬ ইটভাটা
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর ভাষণ আইরিশ স্কটিশ-ওয়েলশ ভাষায়