ভূমিকা : হৃদরোগ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ। এই মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই ঘটে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহে। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৩০ ভাগই হৃদরোগজনিত কারনে। হৃদরোগ এদেশের বিকাশমান মহামারী। আগামীতে তার প্রকোপ আরো বাড়বে এবং বিকাশমান এই মহামারি পূণাঙ্গ মহামারিতে রূপ নেবে তা একরকম নিশ্চিত। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হৃদরোগের অঞ্চলভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায় তা চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বাধিক। গবেষণালব্ধ ফলাফলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত না হলেও দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে এটি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে। একসময়ে হৃদরোগ ছিল প্রাশ্চাত্য ধনাঢ্য সমাজের অসুখ। তা কেন বাংলাদেশের বাড়ছে? আবার কেনইবা তার ব্যাপকতা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি? তা এক গবেষণার বিষয়। হদরোগের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানের উপস্থিতি তার অন্তর্নিহিত কারণ।
হৃদরোগের পরিবর্তনশীল ধারা :
অনেকদিন যাবৎ মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস কাজ করেছে যে মানব দেহের হৃৎপিণ্ড সৃষ্টিকর্তার এমন এক সৃষ্টি যে তা রোগ ও ভোগান্তির ঊর্ধ্বে। হৃদরোগ আধুনিক সভ্যতাসৃষ্ট অসুখ। বিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মানুষের অধিকাংশ রোগ ছিল অপুষ্টি ও জীবাণু সংক্রমণজনিত। এই শতকের শেষের দিকে মেদ বাহুল্য, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি ক্রনিক অসুখ এই স্থান দখল করে। যাদের অধিকাংশের সাথে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা সরাসরি সম্পর্কিত। বিগত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে হৃদরোগ বেড়েছে দ্বিগুণ। পাশাপাশি তা আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নত বিশ্বে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বর্তমানে এসব দেশে হৃদরোগের প্রকোপ আমেরিকার তুলনায় চারগুণ বেশি। খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্যের পুষ্টিগত দিককে এক্ষেত্রে বিপদ ঝুঁকি হিসাবে বিভিন্ন গবেষণা নিশ্চিত করেছে। ইন্টারহার্ট, ফ্রেমিংহাম, লায়ন ডায়েট হার্ট স্টাডি ইত্যাদি তার মধ্যে অন্যতম। এখানে হৃদরোগীদের রোগতত্ত্বীয় বিশ্লেষণে দেখা যায় এখানে শহর গ্রাম সবখানে হৃদরোগ বেড়েছে এবং গ্রামাঞ্চলে তা বেড়েছে চারগুণ। এখানে ধনী, নির্ধন, পাবলিক, ভিআইপি, পুরুষ, মহিলা, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বায়ন, দ্রুত নগরায়ণ ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনজনিত জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনই তার জন্য দায়ী।
নীল সবুজের চট্টগ্রাম ও হৃদরোগ :
চট্টগ্রাম নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে ভৌগোলিকভাবে রয়েছে সবুজ পাহাড় আর নীল সাগরের অপূর্ব সমন্বয় ও সহাবস্থান। নীল সাগর আর সবুজ প্রকৃতি (পাহাড়, বাগান, মাঠ, পার্ক) দীর্ঘদিন ধরে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনাচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তা নিশ্চিত করে মানসিক চাপ ও বায়ুদূষণ মুক্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ যা মানুষকে রোগমুক্ত দীর্ঘজীবন দান করে। ব্রিটিশ বায়োব্যাংক এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় এ ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষদের হৃদরোগের ঝুঁকি, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, মেদবাহুল্য, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অন্যদের তুলনায় কম। সমুদ্র উপকূলীয় অধিবাসীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। একইভাবে দেখা যায় ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের বাসিন্দাগণ কম হৃদরোগে ভোগে। তারা সামুদ্রিক মাছ, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, স্বল্প পরিমাণে চর্বিবিহীন মাংস, মৌসুমী ফলমূল, সবুজ শাক সবজি ও স্বল্প পরিমাণে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করে। রান্নায় তারা ব্যবহার করে জলপাই তেল । তাদের সবাই দুপুরের খাবারের পর কিছুক্ষণ ঘুমাতে যায়, যা মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাত্রাই বহুল আলোচিত ‘ভূমধ্যসাগরীয় খাবার ও জীবনযাত্রা’ হিসেবে পরিচিত, যা হৃদরোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সুপারিশ করে থাকে। সাগর আর পাহাড়বেষ্টিত চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকেও হৃৎ-বান্ধব হবার কথা। কারণ এখানে সাগরের সাথে রয়েছে সবুজ পাহাড়। চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি।
চট্টগ্রামের অধিবাসীগণ একদা মানসিক চাপহীন ও আয়েসী জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখানে পাওয়া যায় প্রচুর সামুদ্রিক মাছ যাতে রয়েছে হৃৎপিণ্ডের জন্য পরম উপকারী ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। কিন্তু প্রথাগত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা থেকে এই অঞ্চলের মানুষ সরে এসেছে যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে। এখানেই ঘটেছে বিপত্তি। এতে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। বিশ্বায়ন ও দ্রুত নগরায়ণ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে। সনাতনী খাদ্যাভ্যাস ছেড়ে বর্তমানে গৃহীত খাবার উচ্চ ক্যালরি, লবণ ও সম্পৃক্ত চর্বি সমৃদ্ধ। আরো গৃহীত হচ্ছে ক্ষতিকারক ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ বিভিন্ন মচমচে ও মুখরোচক খাবার (যেমন চিপ্স, ফাস্টফুড ইত্যাদি)।
রান্নায় ব্যবহৃত হচ্ছে পাম অয়েল, ডালডাসহ বিভিন্ন হৃদরোগ সৃষ্টিকারী তেল। দ্রুত নগরায়ণ ও প্রতিযোগিতামূলক জীবনযাত্রা মানুষকে অলস করে তুলেছে। এতে বাড়ছে মেদবাহুল্য, দেখা দিচ্ছে ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ যা হৃদরোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে সৃষ্ট লবণাক্ততা এই অঞ্চলে রক্তচাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য, নগর সভ্যতার দ্রুত বিকাশজনিত এই ধরনের পরিবর্তনই একদা পশ্চিমা বিশ্বে হৃদরোগের উচ্চ প্রকোপের জন্য দায়ী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। তবে তারা এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়েছে। হৃদরোগ প্রতিরোধ জোরদার করেই তারা তা করেছে। এই বিষয়ে তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান পরিস্থিতির উত্তরণে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। একসময় পশ্চিমা বিশ্বে ধনীদের মধ্যে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি ছিল। তাদের ধনাঢ্য ও শিক্ষিত সমাজের সদস্যগণ দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে তা নিয়ন্ত্রণ করে এনেছে। পরবর্তীতে তা সমাজের মধ্য ও নিম্ন বিত্তের মধ্যে উচ্চহারে দেখা দেয়। আমাদের দেশেও বর্তমানে একই চিত্র বিরাজমান। এখানে ধনীর অসুখ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হৃদরোগ আজ গরিব ও মধ্যবিত্তেরও অসুখ। এটা সচেতনতার অভাব তথা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলশ্রুতি। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির উত্তরণে কমিউনিটিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।
খাদ্যাভ্যাসই কারণ :
ভৌগোলিক পরিস্থিতি হৃৎবান্ধব হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে হৃদরোগের উচ্চ প্রকোপের প্রধান কারণ এতদ্ অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস বলে ধারণা করা হয়। খাদ্যাভ্যাসের সাথে হৃদরোগের এই কারণগত সম্পর্ক বিজ্ঞানসম্মতভাবে পঞ্চাশের দশকে প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন অ্যামেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এন্সেল। তিনি লক্ষ্য করেন, দক্ষিণ ইতালির কিছু ক্ষুদ্র শহরের নিম্ন বিত্তের অধিবাসীগণ নিউইয়র্কে অভিবাসী হয়ে স্থায়ী হওয়া তাদের উচ্চ বিত্তের আত্মীয়দের তুলনায় স্বাস্থ্যবান ও দীর্ঘায়ু। এন্সেল অভিমত দেন যে, এই পার্থক্য উভয়ের খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতার কারণে। তিনি তার এই পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করতে নিরীক্ষা শুরু করেন। এটাই বিখ্যাত সাত দেশিয় সমীক্ষা। ফিনল্যান্ড, হল্যান্ড, ইটালি, আমেরিকা, গ্রিস, জাপান এবং যুগোস্লাভিয়া এই সাত দেশ নিয়ে এই সমীক্ষা। উদ্দেশ্য জীবনযাত্রা, পুষ্টি এবং হৃদরোগের পারস্পরিক সম্পর্ক উদঘাটন। এই গবেষণাই ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রাকে হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমাণ করে।
বর্তমানে তা আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক সর্বজনীনভাবে সুপারিশকৃত। খাদ্যের উপাদান ও তার পুষ্টিগত দিকের পাশাপাশি তার প্রস্তুতপ্রণালী, সংরক্ষণ ও পরিবেশন হৃদরোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। বলা বাহুল্য তা অধিকাংশ খাবারকে মুখরোচক করতে ও রসনা তৃপ্তির নিমিত্তে করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সামুদ্রিক মাছকে অতিমাত্রায় ফ্রাই করলে তার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড নষ্ট হয়ে যায়; সৃষ্টি হয় মারাত্মক হৃদরোগ সৃষ্টিকারী ট্রান্সফ্যাট। মাছকে মুখরোচক শুঁটকি করে গ্রহণ করলেও উপকারী এই ফ্যাটি এসিড নষ্ট হয়। মাংসের আনুষঙ্গিক উপাদান যেমন গিলা, কলিজা, নলা উচ্চ কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ। বস্তুত কোলেস্টেরলের মাত্রার সাথে এই সব খাবারের স্বাদ সরাসরি সম্পর্কিত। এছাড়া পোড়া তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ভেজে কালো করে তৈরি ভুনা (কালো ভুনা হিসাবে বহুল পরিচিত) ইত্যাদি খাবারে সৃষ্টি হয় ট্রান্সফ্যাট যা সরাসরি হৃদরোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতির এই ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তা ৩০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তাই এ ব্যাপারে জনসচেতনতা জরুরী। হৃদরোগ সৃষ্টিকারী খাবার গ্রহণের পাশাপাশি এখানে হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী খাবার যেমন ফলমূল, সবজি গৃহীত হয় প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে দৈনিক ৪০০ গ্রাম (দিনে ১০০ গ্রাম করে ৪বার) ফল ও সবজি গ্রহণ আবশ্যক। তবে এতে আলু ও অন্যান্য শর্করা সমৃদ্ধ সবজি অন্তর্ভূক্ত নয়। চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে এখন প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদন হয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম গৃহীত হয়। উল্লেখ্য ফলমূল ও শাকসবজিতে কোলেস্টেরল থাকে না। এতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এভাবে তা জীবন রক্ষাকারী খাদ্য। খাদ্যাভ্যাসে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি হৃদরোগ সৃষ্টিকারী অন্যান্য উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। ধূমপান বর্জন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, শরীরের প্রত্যাশিত ওজন বজায় রাখা ও নিয়মিত ব্যায়াম আবশ্যক।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে হৃদরোগের উচ্চ প্রকোপ সত্ত্বেও তার প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখানে নিতান্ত অপ্রতুল। সরকারি পর্যায়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। এই বিভাগের উপর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কঙবাজার ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লার দক্ষিণাংশ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একাংশের বিশাল জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল। এই বিশাল এলাকার প্রায় ৪ কোটি মানুষের সরকারি পর্যায়ে হৃদরোগ সেবাপ্রাপ্তির একমাত্র স্থান এইটি। তার পাশাপাশি কিছু বিশেষায়িত ক্লিনিক রয়েছে যার অধিকাংশে চিকিৎসকসহ পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ সুবিধা অনুপস্থিত। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ রোগীর ভারে ন্যুজ। এখানে অন্তত দুই তৃতীয়াংশ রোগীকে বিছানার বাইরে ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। কারণ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য আরামদায়ক বিছানা তথা পূর্ণ বিশ্রাম জরুরি। তবুও যারা এই ওয়ার্ড পর্যন্ত পৌছাতে পারে তার এক অর্থে সৌভাগ্যবান। কারণ হার্ট অ্যাটাকের অন্তত এক তৃতীয়াংশ রোগী হঠাৎ মৃত্যুবরণ করে। তারা হাসপাতালের সিসিইউ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই মারা যায়। আরো এক তৃতীয়াংশ অবস্থানগত, আর্থিক ও অন্যান্য কারণে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে না। তাই অধিকাংশ হার্ট অ্যাটাকের রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে অপারগ। তাদের হার্ট অ্যাটাকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান যেমন ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের উচ্চ কোলেস্টেরল, মেদ বাহুল্য প্রতিরোধ ও তার উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে হৃদরোগ তথা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ের হৃদরোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে হৃদরোগের মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ জরুরি।
সামর্থ্যবান হৃদরোগীদের কেউ কেউ চট্টগ্রামের বাইরে রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কিংবা অন্যান্য উন্নত দেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে হৃদরোগে আক্রান্ত বিশাল সংখ্যক রোগীর তুলনায় এই সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য। আবার হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের অন্যান্য জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা আবশ্যক। এখানে কালক্ষেপনে মৃত্যু ডেকে আনে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের হৃদরোগী চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রামেই এই চিকিৎসাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং তার উন্নয়নের বিকল্প নেই।
এই ধরনের প্রেক্ষাপটে ও বাস্তবতায় চট্টগ্রামে হৃদরোগ সেবা প্রদানের মহান ব্রত নিয়ে গত ২৫ মে, ২০২২ ইং চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন আত্মপ্রকাশ করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান ড. আহমেদ কায়কাউস এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। উনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমাজ হিতৈষী ও দানশীল ব্যক্তিবর্গ, চিকিৎসকসহ সর্বস্তরের চট্টলবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে। অদ্য ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ইং এই প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে। চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন ঢাকাস্থ বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর ও যৌথ মূলধনী কোম্পানির নিবন্ধন সনদ লাভ করেছে। চট্টগ্রাম শহরের ও আর নিজাম রোডস্থ কার্যালয়ে এই সংগঠনের বহিঃ বিভাগ চিকিৎসা ও হৃদরোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমের শুভ সূচনা।
লেখক : মহাসচিব, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন; সাবেক বিভাগীয় প্রধান, হৃদরোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ