চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড

কনকনে ঠান্ডা, তাপমাত্রা আরো কমতে পারে

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

আবুল বশর। গ্রামের বাড়ি ভোলা। কাজের সন্ধানে দুই মাস আগে এসেছেন চট্টগ্রাম শহরে। স্থায়ী কোনো কাজ পাননি এখনো। দিনমজুর হিসেবে দিনভর যা পান তাই করেন। রাত কাটান ফুটপাতে। গতকাল সন্ধ্যায় তার সাথে কথা হয় নগরের রেল স্টেশন এলাকায়। আজাদীকে জানান, রাত গভীর হলে বাড়ে কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠাণ্ডায় গত কয়েক রাতে ভালোমতে ঘুমাতে পারেননি। আবুল বশরের অদূরেই দেখা গেল গোল হয়ে বসে আছেন বেশ কয়েকজন নারীপুরুষ। মাঝখানে খড়কুটো দিয়ে জ্বালানো হয়েছে আগুন। তারা জানান, শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাচ্ছেন। এদের মধ্যে ধুলোমাখা চাদর জড়ানো মলিন চেহারার ষাটোর্ধ্ব নজির আহমেদ বললেন, আমাদের ঘর নেই। খোলা আকাশের নিচে থাকি। এ বছর আজকের মত শীত আর পড়েনি। এমন শীত আরো কয়েকদিন পড়লে তো আমাদের অবস্থা খুব করুণ হবে।

গতকাল নগর ঘুরে আবুল বশর ও নজির আহমেদ এর মত আরো কয়েকজন ভাসমান লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কনকনে ঠান্ডায় তাদের দুর্ভোগ ও কষ্ট বেড়েছে। এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গতকাল শুক্রবার। আজ শনিবার তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। এ ছাড়া এ মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। তবে তা নগরে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল নগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এছাড়া গতকাল নগরে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে দিনে ও রাতে বাতাসে তাপমাত্রা কমছে। সঙ্গে ঘন থেকে মাঝারি কুয়াশার চাদর বিস্তৃত হচ্ছে। এ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শৈত্য প্রবাহ না হলেও নগরে অনেক বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড যতই কমবে শীতের তীব্রতার অনুভূতি ততবেশি অনুভূত হবে।

আবহাওয়াবিদের ভাষায়, সাধারণত মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের সময় ধরা হয়। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে। ফলে বাংলাদেশে সুর্যের রশ্মি পড়ে তির্যকভাবে। তাই কমতে থাকে তাপমাত্রা। ঝেঁকে বসে শীত। অবশ্য এ বছর ডিসেম্বর মাসে খুব বেশি শীত অনুভূত হয়নি নগরে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবদুল বারেক আজাদীকে বলেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান যত কমবে শীতের অনুভূতিও তত বাড়বে। আজ (গতকাল) চট্টগ্রামের আবহাওয়া সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ডিফারেন্স কিন্তু বেশি ছিল না। তাই এখানে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। আগামীকাল (আজ শনিবার) তাপমাত্রা আরেকটু কমতে পারে। এরপর রোববার থেকে বাড়তে পারে। শীত বেশি অনুভূত হলেও কুয়াশা বেশি পড়ছে না। এর কারণ হচ্ছে বাতাস। অর্থাৎ বাতাস বয়ে গেলে তখন কুয়াশা বেশি জমতে পারে না।

এদিকে সাধারণ লোকজন বলছেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে। গতকাল লালদীঘি পাড় সংলগ্ন ফুটপাত এলাকায় রহিম নামে ছিন্নমূল অধিবাসী আজাদীকে বলেন, রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতের কামড়ও যেন বেড়ে যায়। আমবাগান বস্তিতে রাত কাটানো রিকশা চালক জহির বলেন, তীব্র ঠাণ্ডায় আমরা যারা বস্তিতে থাকি তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। প্রচন্ড ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে বস্তির ছেলে মেয়েরা প্রতি রাতে বিভিন্ন খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে থাকে। এদিকে নগরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি বলে জানা গেছে।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় : গতকাল দেশের সর্বনিমা্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ, পাবনা ও দিনাজপুরে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তা আজ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এছাড়া গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় গতকাল দিনভর সূর্যের দেখা মিলেনি বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবছরের শুরুতে রেলে বড় নিয়োগ
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়ায় ঘর থেকে বের করে রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা