চট্টগ্রাম জেলায় আমদানিকারকরা পাইকারি ব্যবসায়ী বা ডিলারদের কাছে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করবেন ১৫৩ টাকায়। ডিলাররা সেটা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবেন ১৫৫ টাকায়। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করবেন সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে নগরীর সার্কিট হাউসে গতকাল মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সাথে বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্তও হয়েছে সভায়। মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
সভা শেষে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ভোজ্যতেলের দোকানগুলোতে আমরা একটি অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছিলাম। দোকান থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে গেছে। আমদানিকারক, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারের প্রতিনিধিসহ সবার সম্মতিক্রমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এখানে আমদানিকারক সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরাও আছেন। এ সিদ্ধান্ত কিন্তু সবার জন্য বলবৎ থাকবে। বাজারে নিয়মিত আমাদের টিম থাকবে। সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সেটা অবশ্যই আমাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ আজ খুব অসহায়। আমরা যে মৌলিক অধিকারগুলোর কথা বলি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা–এসব থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। চারপাশে যে অস্থিরতা সেটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের সভার মধ্যে আজ তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হলো, সেটা পুরো চট্টগ্রাম জেলার জন্য প্রযোজ্য। আজ এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কেউ যদি না মানে বা নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো রমজানে ভর্তুকি দিয়ে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরকে বাজারের এই বিদ্যমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, খোলা বাজারে সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। তবে কেউ চাইলে এটার নিচেও বিক্রি করতে পারেন। এটা রমজান মাস পর্যন্ত চলবে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো ব্যবসায়ী নিজের ইচ্ছেমতো দামে তেল বিক্রি করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এখানে টিকে গ্রুপ আছে। তারা অনেকটা ছাড় দিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তারা ১৫৩ টাকায় পাইকারি বাজারে তেল ছাড়বেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১৫৫ টাকায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবেন। যেটা ভোক্তার কাছে ১৬০ টাকায় বিক্রি করবেন তারা।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের শক্তি বেশি নাকি ব্যবসায়ীদের শক্তি বেশি তা আমরা দেখতে চাই। শুধু জরিমানা নয়, প্রয়োজনে জেলও দেব।
এর আগে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে বক্তব্য রাখেন। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. শাহেদ বলেন, বাজারে দুটি বড় শিল্পগ্রুপ এখন তাদের পণ্য বিপণন করছে না। বোতলের তেলের ক্যাপাসিটি সবার নেই। আমরা যে খোলা তেল বাজারে বিক্রি করি সেগুলো অনেকে নিয়ে নিজেদের মতো করে বিপণন করে। এরপর বিভিন্ন ব্র্যান্ড দিয়ে তারা সেগুলো বাজারে ছাড়ে। কিন্তু রমজান এলেই বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মনিটরিংয়ের কারণে তারা সেটা বন্ধ রাখে। তাই সংকট দেখা দেয়। এছাড়া গত এক মাস ধরে টিকে গ্রুপ তার পণ্য ডেলিভারি করতে পারেনি। সিটি গ্রুপও পারেনি। এজন্য বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এজন্য খোলা তেলের দাম বিচ্ছিন্নভাবে একটু বেড়েছে। আমরা জানি দাম বাড়লে চাহিদা কমে। কিন্তু আমাদের দেশে দাম বাড়লে চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায় না।
সভায় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিদল, ভোক্তা প্রতিনিধিদল ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।