চট্টগ্রামে বোরো আবাদযোগ্য জমি বেড়েছে ১০ হাজার হেক্টর

৪২ হাজার কৃষক পেলেন প্রণোদনা

| শনিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

৪২ হাজার কৃষক পেলেন প্রণোদনা

মোরশেদ তালুকদার

চট্টগ্রামে ২০২১ সালে ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যা চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৭ হাজার ১০ হেক্টর। অর্থাৎ তিন মৌসুমের ব্যবধানে চট্টগ্রামে বোরো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে ১০ হাজার হেক্টর জমি। এবার লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ হবে। তাই এ মৌসুমে কাঙ্খিত ফলনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষি বিভাগ। এছাড়া চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে উৎসাহ দিতে চট্টগ্রামের ৪২ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এবার নষ্ট হয়নি বীজতলাও। তা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তবে কৃষকরা বলছেন, বোরো আবাদ পুরোটা সেচ নির্ভর। সেচের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলেই আবাদ এবং ফলন উভয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। তাছাড়া সেচের অন্যতম উপকরণ ডিজেলের দামও বাড়তি। কৃষি শ্রমিকের মজুরিও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে প্রতি কানি জমিতে বোরো আবাদে ১৩১৪ হাজার টাকার বেশি খরচ হতে পারে। আবার ধান কাটার সময় খরচ হবে আরো চারপাঁচ হাজার টাকার বেশি। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি কানি জমিতে বোরো চাষাবাদে ২০ হাজার টাকার মত খরচ হতে পারে। কিন্তু ধানের দাম সেভাবে পাওয়া যায় না। তাই বোরো চাষাবাদ নিয়ে অনেক কৃষক এখনো সংশয়ে আছেন।

অবশ্য কৃষি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বোরো ধানে অতিরিক্ত পানি লাগার বিষয়টি পুুরোপুরি সঠিক নয়। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি নিবন্ধে বলা হয়, ‘বোরো ধান নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা আছে, এক কেজি ধান উৎপাদন করতে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। কিন্তু ব্রি ও অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কর্তৃক এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, সেচের পানির হিসেবে কৃষক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থাপনায় প্রতি কেজি ধান উৎপাদন করতে এক হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ লিটার পানি লাগে। অপচয় বাদ দিয়ে শুধু ধানের উৎপাদনে প্রকৃত পানির খরচ হিসাব করলে প্রতি কেজি ধান উৎপাদন করতে ৫৫০৬৫০ লিটার পানিই যথেষ্ট’। এছাড়া একই নিবন্ধে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরের বোরো ধান চাষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কৃষকরা বোরো ধান চাষ করে হেক্টর প্রতি গড়ে ৫০২ টাকা হারে লাভ করেছেন।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে? : কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২১ হাজার ২২৬ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ৪৫ হাজার ৭৮৪ হেক্টর জমিতে উফশী আবাদ হবে। এর আগে গত বছর (২০২৩) চট্টগ্রামে ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিপরীতে চাষাবাদ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে। এর আগে ২০২২ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬২ হাজার ৭৫০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর। ২০২১ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার হেক্টর। সেবার চাষাবাদ হয় ৬২ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান আজাদীকে বলেন, ইনশাআল্লাহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আশা করছি আরো বেশি হবে। ইতোমধ্যে বীজতলা শতভাগ হয়েছে। এখন চারা রোপণ করা হচ্ছে। ১০১২ শতাংশ রোপণ হয়ে গেছে।

বিগত সময়ের তুলনায় এবার লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণের বিশেষ কোনো কারণ আছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, পুরো দেশে তো আমান ধান প্রধান শষ্য। কিন্তু ফলনের দিক দিয়ে বেশি হচ্ছে বোরো। বোরো চাষাবাদে পানি সেচটা গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামে সেচের সুযোগসুবিধাটা একটু কম। যদি সুযোগসুবিধা বেশি পাওয়া যেত তাহলে এখানে আরো বেশি চাষাবাদ হতো।

এ কর্মকর্তা বলেন, সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে যদি পানির ব্যবস্থা করা যায়, স্লুইচ গেইটগুলো যদি সংস্কার করা যায় আর সেচের জন্য যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে বোরো চাষাবাদ আরো বাড়বে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করছি। হাইব্রিডের জন্য আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছি। ৪২ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে বীজ দিয়েছি।

লক্ষ্যমাত্রা বেশি বাঁশখালীতে : চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বাঁশখালীতে ১১ হাজার ৪১৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। সবচেয়ে কম ১০ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সন্দ্বীপ উপজেলায়। সীতাকুণ্ডে এ লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ২২ হেক্টর। এছাড়া নগরের তিন থানার মধ্যে পাঁচলাইশে ২৬২৭ হেক্টর, পতেঙ্গায় ১ হেক্টর এবং ডবলমুরিংয়ে লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ হেক্টর।

ফটিকছড়ির বোরো চাষী আকাশ আজাদীকে বলেন, বোরো চাষাবাদে পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন তো ডিজেলের দাম বেশি। কৃষি শ্রমিকের মজুরিও বেশি। সব মিলিয়ে চাষাবাদের আগে কৃষক অনেক চিন্তা ভাবনা করছেন। ফটিকছড়িতে এখনো বহু জমি খালি পড়ে আছে। ফটিকছড়িতে এবার লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৯৮১ হেক্টর।

গতকাল রাউজানের কদলপুরে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বোরো চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেকে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষাবাদের উপযোগী করছেন। অনেকে চারা রোপণ করছেন। কেউ ব্যস্ত আইল বাঁধা নিয়ে। স্থানীয় কৃষক আবদুল মতিন আজাদীকে বলেন, চাষাবাদে আগের মত লাভ হয় না। কিন্তু প্রতিবছর করতে করতে নেশা হয়ে গেছে। তাই লোকসান হলেও চাষ করি। ইতোমধ্যে ২ কানি জমিতে বোরো রোপণ করেছি। আরো কয়েক কানি বাকি আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির ৪ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধচায়ের বিল চাওয়ায় কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা