‘দলের পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে জেলা কমিটির কাছে পাঠাবে। পরবর্তীতে জেলার সভাপতি অথবা আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক অথবা সদস্য সচিব সুপারিশ করে পাঠাবে কেন্দ্রে।’ পৌরসভাগুলোতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রের এমন নির্দেশনা ছিল বিএনপির। কিন্তু এ নির্দেশনা মেনে চট্টগ্রামে প্রার্থী বাছাইয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলটি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, উত্তর জেলার আওতাধীন পৌরসভাগুলোতে সাংগঠনিক বিভক্তি এবং জেলা কমিটিতে নেতৃত্ব সংকটের জন্যই তৈরি হয়েছে জটিলতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তর জেলার প্রতিটি পৌরসভায় দুটি করে সাংগঠনিক কমিটি আছে। ফলে তৃণমূল থেকে একক প্রার্থী বাছাই করা কঠিন হচ্ছে। আবার উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আছেন জেলে আছেন এবং সদস্য সচিব মারা গেছেন। ফলে জেলা থেকেও সুপারিশ করা যাচ্ছে না। এদিকে দক্ষিণ জেলার আওতাধীন পৌরসভাগুলোতে কোনো সংগঠনিক কমিটিই নাই। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে সেখানেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সবার মতামতের ভিত্তিতেই কেন্দ্র একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তর জেলার আওতাধীন পৌরসভাগুলো হচ্ছে- সন্দ্বীপ, মীরসরাই, বারৈয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, নাজিরহাট ও ফটিকছড়ি। দক্ষিণ জেলার আওতাধীন পৌরসভাগুলো হচ্ছে- পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও বোয়ালখালী।
পৌরসভাগুলোর মধ্যে আগামী ২৮ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডে নির্বাচন হবে। এতে একক প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। নিজ এলাকা হওয়ায় কারাগার থেকে তিনজনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন উত্তর জেলার আহ্বায়ক লায়ন আসলাম চৌধুরী। সেখান থেকেই বাছাই করা হয় একক প্রার্থী। ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সন্দ্বীপ পৌরসভার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠায়নি পৌর ও জেলা কমিটি। তবে গতকাল পর্যন্ত পাঁচজন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরা হচ্ছেন- আজমত আলী বাহাদুর, আলমগীর ঠাকুর, মনির তালুকদার, আবুল বশর ও জহিরুল ইসলাম।
এদিকে ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০২২ সালে এবং নাজিরহাট পৌরসভার মেয়াদপূর্ণ হবে ২০২৩ সালে। বোয়ালখালী পৌরসভার ২০১৯ সালে মেয়াদ পূর্ণ হলেও মামলার কারণে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। ২০১২ সালে হাটহাজারী পৌরসভা গঠিত হলেও এখনো পর্যন্ত সীমানা বিরোধ নিয়ে মামলা জটিলতায় নির্বাচন হয়নি। সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপের নির্বাচন শেষে তৃতীয় ধাপে জটিলতাহীন পৌরসভাগুলোর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলো আমাদের উত্তর ও দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক কমিটির আওতায়। উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেলে এবং সদস্য সচিব মারা গেছেন, তাই সুবিধার জন্য আমি দলীয় ফরম সরবরাহ করছি। তবে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে কেন্দ্র। এর মধ্যে উত্তরের আওতাভুক্ত সীতাকুণ্ডে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এখন সন্দ্বীপে দলীয় মনোনয়ন ফরম দিচ্ছি। ইতোমধ্যে পাঁচজন ফরম সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে উত্তরের আওতাভুক্ত অন্য পৌরসভাগুলোর শিডিউল ঘোষণা করা হলে দলীয় ফরম বিতরণ করবো। আবার দক্ষিণ জেলায় আমাদের সাংগঠনিক কমিটি আছে। তাই সেখানে কমিটির নেতৃবৃন্দই দলীয় ফরম দিবেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, সামগ্রিকভাবে কেন্দ্রীয় যে নির্দেশনা আছে সে আলোকে আমরা প্রার্থী বাছাই করবো। এ বিষয়ে দু’য়েকদিনের মধ্যে সভা করবো। ইউনিট নেতৃবৃন্দ এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের বিএনপির যিনি প্রার্থী ছিলেন তাদের মতামত নিয়েই প্রার্থী বাছাই করে তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবো। ইতোমধ্যে প্রত্যেক পৌরসভা থেকে তিন থেকে পাঁচজন করে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রায় সবাই শক্ত প্রার্থী। তাই ধারণা করছি প্রার্থী বাছাইয়ে নিজেদের মধ্যেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে আমরা চেষ্টা করব সমাঝোতার মাধ্যমে একক প্রার্থী বাছাইয়ে।
দক্ষিণ জেলার আওতাধীন পৌরসভায় সাংগঠনিক কমিটি না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি না থাকলেও আগের কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা আসছেন। তাই তাদের মতামত নিবো।
গতবারের ন্যায় এবার কোনো পৌরসভায় শরীক দলকে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা প্রতিটি পৌরসভার জন্যই প্রার্থী বাছাই করবো। শরীক দলকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিবে কেন্দ্র।
উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটা সত্য আগে মতবিরোধ ছিল। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যা হবে না। পৌরসভাগুলোতে দুটি কমিটি থাকলেও সবাই একসঙ্গে বসেই প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে সুপারিশ করবো। এ বিষয়ে সব পক্ষ একমত হয়েছি। দুয়েকদিনের মধ্যে সম্মিলিতভাবে সন্দ্বীপের জন্য নাম প্রস্তাব করবো। এরপর অন্য পৌরসভাগুলোর বিষয়ে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিব।