‘স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় গড়ে ওঠা কয়েকটি সিন্ডিকেট পাহাড়ে ঘর স্থাপন করে তা ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছে। এসব সিন্ডিকেটের কারণে স্থানীয় প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটির সাথে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় জনমনে সরকারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। স্থানীয় থানার ওসিরা এ কাজে জড়িয়ে পড়ায় প্রশাসনের ওপর জনগণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
চট্টগ্রামের পাহাড় দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গোপনীয় প্রতিবেদনের অংশ এটি। যেখানে পাহাড় দখলের সঙ্গে সিন্ডিকেটের তথ্য আছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন এবং আজাদীর অনুসন্ধানেও প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেটের খোঁজ মিলে। এসব সিন্ডিকেট শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে বিক্রি করে। কয়েক জায়গায় গড়ে তোলে আবাসিক এলাকাও। নির্মাণ করা হয় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
পাহাড় দখলদারদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম–১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন বাচ্চু, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। এর মধ্যে বেশি অভিযোগ আছে জসিমের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে আবাসিক এলাকা ও সমবায় সমিতির নামেও পাহাড় কাটা হয়। বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কেটেছে চসিক ও সিডিএ। জেলা প্রশাসনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাহাড় কাটার ফলে ভূমির ঢাল বৃদ্ধি পায়, গাছপালার আচ্ছাদন বিনষ্ট হয়, মাটির দৃঢ়তা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টির পানি মাটির গভীরে প্রবেশ করে। এতে পাহাড় ধস হয়।’
পৃষ্ঠপোষকদের পরিচয় : ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বরাবর পাঠানো প্রতিবেদনে পাহাড় দখলকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের নাম উঠে আসে। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন পাওয়ার কথা বললেও কখনো পৃষ্ঠপোষকদের নাম প্রকাশ বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। সম্প্রতি আজাদীর হাতে এসেছে প্রতিবেদনটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, লালখান বাজার মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অসংখ্য ঘর তৈরি করে ঘরপ্রতি মাসিক টাকা আদায় করছে। ঘর ভাড়া দেওয়া ও তোলার দায়িত্বে আছেন মামুন, শাজাহান, আব্দুল্লাহ হাছান এবং শহীদুল হক। আর তাদের পৃষ্ঠপোষক সিন্ডিকেট হিসেবে তৎকালীন মহানগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম ও মহিউদ্দিন বাচ্চুর নাম রয়েছে প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলশী থানার বেলতলীঘোনা পাহাড়ে বসবাস করছে কয়েক হাজার মানুষ। এখানেও প্রভাবশালী স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট প্রায় ৮০০–১০০০টি ঘর স্থাপন করে ঘরপ্রতি ভাড়া আদায় করছে। ভাড়া আদায়কারী হিসেবে হুমায়ুন, সেলিম, আনিস, রশিদ, সামসুর নাম রয়েছে। এখানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম, যিনি একই ওয়ার্ডের চসিক কাউন্সিলর ছিলেন।
প্রতিবেদনে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দুই পুলিশ কর্মকর্তারও নাম রয়েছে। তারা হচ্ছেন খুলশী ও বায়েজিদ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম ভূইয়া ও সায়রুল ইসলাম।
আজাদীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘর নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কাটা হয়েছে। মতিঝর্ণায় পরবর্তীতে ভাড়া আদায়কারী ও দখলদারের সংখ্যা বেড়েছে। মতিঝর্ণায় পাহাড় দখল করে বাড়ি নির্মাণ, পুকুর খনন ও ভাড়া ঘর নির্র্মাণ করেছেন সাবেক কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমেদ মানিক। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এ কাউন্সিলরের কাছ থেকে ২৮ লাখ টাকায় সরকারি পাহাড় কিনে (!) সেখানে স্কুল নির্মাণ করে জাগো ফাউনেন্ডশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মতিঝর্ণা পাহাড়টির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ের। সংস্থাটির কয়েক বছর আগের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মতিঝর্ণা পাহাড়ের ২৬ একর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে ২ হাজার ৪১টি। যেখানে কাঁচাঘর থেকে শুরু করে বহুতল ভবনও রয়েছে।
আকবরশাহ থানার পাহাড়খেকোরা : আকবরশাহ থানার ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের উত্তর পাহাড়তলী মৌজার লেক সিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন সংযোগ সড়কের পার্শ্ববর্তী স্থানে পাহাড় কেটে ১৫ কাঠা একটি প্লট গড়ে তোলা হয়। সেখানে কলাগাছ রোপণ করে দেওয়া হয় ৬ ফুট উচ্চতার সীমানাপ্রাচীর। জনৈক জহির মিস্ত্রির তত্ত্বাবধানে সেখানে গত জুলাই মাস থেকে পাহাড় কাটা শুরু হয়। এ পাহাড় কাটার নেপথ্যে আছেন সাবেক কাউন্সিলর জসিম ও হালিশহরের বাসিন্দা রোকসানা বেগম।
এছাড়া আকবরশাহ থানার উত্তর লেক সিটি হাউজিং এলাকায় পাহাড় কেটে কয়েক মাস আগে নির্মাণ করা হয় একতলা ঘর। তার পাশেই পাহাড় কেটে আরেকটি প্লট করা হয়। এখানে পাহাড় কাটায় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বায়েজিদের ফাতেমা তুজ জোহরা ও তার স্বামী মোহাম্মদ শামীম ও সাবেক কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের। ফাতেমা জানান, জহুরুল আলম জসিম থেকে পাহাড়ি জায়গাটি কিনেছেন। বেদখল হওয়া রোধে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন।
জানা গেছে, আকবরশাহ লেক সিটি আবাসিক এলাকা, ফয়’স লেক মাইট্টাগলিতেও পাহাড় কেটে প্লট নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি সেখানে অভিযান চালিয়ে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয় ‘কাঁচালংকা’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট। অবশ্য গত মাসে রেস্টুরেন্টটি ভেঙে দেয় জেলা প্রশাসন। এখানে পাহাড় কাটায় জড়িত ফটিকছড়ির মো. আকতার ও সীতাকুণ্ডের মনির হোসেন।
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় কাটা ও ভরাটের স্থান পরিদর্শনে যান বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় কাউন্সিলের জসিমের লোকজন তার গাড়িতে হামলা করে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জসিমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর লেক সিটিতে পরিদর্শনে গিয়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়ায় সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেন।
পাহাড় কেটে আবসিক এলাকা : পাহাড় কেটে জঙ্গল লতিফপুরে মিরপুর আবাসিক কল্যাণ কো–অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের নামে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলেন সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ চারজনের একটি সিন্ডিকেট। আবাসিক এলাকার নামে পাহাড় কেটে ৪–৫ একর জমির মধ্যে ২৫০টি প্লট করা হয়। যেগুলো সোসাইটির নামে বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা একটি মামলায় এসব তথ্য রয়েছে।
সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যরা হচ্ছেন সোসাইটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। গত সেপ্টেম্বরে আবাসিক এলাকাটিতে পাহাড় কাটার সময় সালমা খানম নামে একজন হাতেনাতে আটক করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সিন্ডিকেট করে পাহাড় কাটেন তারা : আকবরশাহ থানার জঙ্গল লতিফপুর মির আউলিয়া মাজার রোডের সাগরিকা প্রিন্টার্স কারখানার পাশের গলির শেষ অংশ। সেখানে গত এক বছর ধরে ৭ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে প্রায় ১০ ফুট গভীর করে কেটে একটি পাকা দালান নির্মাণ করে। যেটার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়নি, শুধুমাত্র চারপাশের দেয়াল ও জানালা লাগানো হয়েছে। এই স্থানের উত্তর পাশে পাহাড় কেটে কলাগাছ রোপণ করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গল লতিফপুর সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি জামাল, সাধারণ সম্পাদক আকতার, মহিউদ্দিন, নূর উদ্দিন, মাসুম, জাকির, সিফাত ও নিজামসহ অজ্ঞাত আরো ৪–৫ জন সেখানে পাহাড় কাটায় জড়িত। এদের একটি সিন্ডিকেট মিরপুর আবাসিক, জঙ্গল লতিফপুর সমাজ কল্যাণ পরিষদ অফিস ও মির আওলিয়া মাজার রোডের আশেপাশের এলাকায় পাহাড় কাটায় জড়িত। তারা পাহাড় কেটে রাস্তা ও প্লট নির্মাণ করে বিক্রি করেন। এ জায়গার মালিক মো. আমজাদ হোসেন। গত ১৮ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার একটি টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। কিন্তু অভিযানের পর থেকে আবার পাহাড় কেটে কলাগাছ রোপণ করে।
এছাড়া মির আওলিয়া মাজার রোডের পাশে পাহাড় কেটে দেয়াল নির্মাণ করেন জনৈক জাহাঙ্গীর আলম। এর পাশে মুরগির খামার গড়ে তোলেন বদরুল নামে একজন। দেয়ালের পাশে পাহাড় কেটে ৪০ ফুট দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত জামাল, আকতার, মহিউদ্দিন, নূর উদ্দিন, মাসুম, জাকির, সিফাত ও নিজাম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লতিফপুর মিরপুর রোডের এনাম ড্রাইভারের বাড়ির পেছনে পাহাড় কাটায় জড়িত রনি, মো. ওসমান, জামাল উদ্দিন, মো. আবুল কাশেম (প্রকাশ নলা কাশেম) মো. মানিক (প্রকাশ মানিক মিস্ত্রি) এবং সবুজ (প্রকাশ ডিশ সবুজ)। ওসমান ও রনির তত্ত্বাবধানে সেখানে পাহাড় কেটে প্লট নির্মাণ করা হয়েছে। এদেরই একটি সিন্ডিকেট মিরপুর আবাসিক, জঙ্গল লতিফপুর সমাজ কল্যাণ পরিষদ অফিস ও লইট্ট্যাগোনা এলাকায় পাহাড় কাটায় জড়িত।
সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের এক প্রতিবেদন বলা হয়, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদ এবং আলী নগর সমবায় সমিতির ব্যানারে অবৈধভাবে পাহাড় দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদ ৩৪টি পাহাড় ও ৮টি টিলা কেটেছে। সেখানে আলী নগর সমবায় সমিতির অধীনে আছে ২ হাজার ৫শ প্লট। পরিবার আছে ২ হাজার। ওই এলাকায় পাহাড় আছে ৩টি। সব পাহাড়ই কাটা হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রস্তুতকৃত এ তালিকার পর ২০২২ সালে সমবায় সমিতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তেরোয়। এসব সমিতিও পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে বিক্রি করে। একই বছর সেখানে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এরপর সেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
পাহাড় কেটেছে চসিক–সিডিএ : আকবরশাহ বেলতলী ঘোনায় ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চসিক। ওই প্রকল্পের আওতায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলাকালে ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল পাহাড় ধসে প্রাণ হারান দুজন। ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সেখানে খাঁড়া ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়। কাটা অংশেই ইটের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই অংশে পাহাড় ধস ঘটে। এ ঘটনায় তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও চসিকের তিন প্রকৌশলীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। চসিকের বিরুদ্ধে লেক সিটি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নেও পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে। এছাড়া বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণের জন্য ১৬টি পাহাড় কাটে সিডিএ। সেখানে অনুমোদনের বেশি পাহাড় কাটায় সিডিএকে ৫ কোটি জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
অন্যান্য এলাকায় যার পাহাড় কাটেন : গত আগস্ট মাসে জঙ্গল সলিমপুরের আরেফিন নগরে পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়। বায়েজিদ চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায়ও পাহাড় কাটেন। এখানে জড়িত রাকিব, মনজুর, এরশাদ ও আরিফ।
শ্রেণি পরিবর্তনে রক্ষা পায় পাহাড়খেকোরা : পাহাড় কাটার ঘটনায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সর্বশেষ গত দুই মাসে সংস্থাটির মহানগর কার্যালয় ৮টি এবং জেলা কার্যালয় নগরে পাহাড় কাটার ঘটনায় পৃথক ৮টি মামলা করে। সংস্থাটির সাম্প্রতিক অভিযানেও পাহাড় কাটার সত্যতা মিলেছে।
অতীতেও বহু মামলা হয়েছে। কিন্তু রক্ষা পায় পাহাড়খেকোরা। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বাস্তবে পাহাড়–টিলা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে বিএস খতিয়ানে অনেক জায়গায় তা ছনখোলা বা নাল হিসেবে রেকর্ড হয়। ফলে আদালতে ওসব মামলা টিকে না। কারণ আইনে পাহাড়–টিলা কাটা শস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরে নগর কার্যালয়ের পরিচালক বলেন, অনেক পাহাড় রয়েছে, যা বাস্তবে পাহাড়। কিন্তু রেকর্ডে ছনখোলা বা নাল। এ সমস্ত রেকের্ডর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, দেখতে মাউন্ট এভারেস্টের মতো পাহাড় হলেও খতিয়ানে পাহাড়–টিলা না থাকলে মামলা টিকবে না। আমরা মামলা করলে আদালতে আসামির আইনজীবী আমাদের হেনস্থা করেন। মিথ্যা অপবাদ দেন। কীভাবে পাহাড় নাল জমি হয় সেটা নিয়ে বলতে গেলে অন্য সংস্থার বিরুদ্ধে যায়। তাই বলতেও পারি না।
কী পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে : কবে থেকে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট দালিলিক প্রমাণ মিলেনি। যখন থেকে এ শহরে বসতি গড়ে উঠে তখন থেকেই পাহাড় কাটা শুরু হয় বলে ধারণা করা যায়। অবশ্য শুরুতে ইংরেজ আমলেই এখানে ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে। ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে শহরের কাতালগঞ্জে প্রশাসনিক দপ্তর করে ইংরেজরা। ওই সময় তারা নিজেদের প্রয়োজনে শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে বা পরিষ্কার করে ভবন নির্মাণ করে। এরপর ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে সিডিএ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের পর থেকে নগরে ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটা শুরু হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে পরবর্তী ১২ বছরে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন। এ সময় বেশিরভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, ষোলশহর ও ফয়’স লেকে।
১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৩২ বছরে নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয়। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে আবাসিক এলাকা ও সমবায় সমিতির নামেও আকবরশাহ, সলিমপুর, লতিফপুর, মিরপুর আবাসিক, লেক সিটি, শাপলা আবাসিকে দখলদাররা পাহাড় কেটেছে।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা : পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, কোথাও পাহাড় কাটার তথ্য পেলেই আমরা অভিযান চালাই। মামলা করি, জরিমানা আদায় করি। গত দুই মাসে ৯টি মামলা করেছি। এর মধ্যে ৮টি আকবরশাহ মিরপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে। সেখানে কয়েকটি সিন্ডিকেট ঘুরেফিরে পাহাড় কাটে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ আজাদীকে বলেন, পাহাড় কাটা নিয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে আটটি মামলা হয়েছে।