করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সর্বশেষ লকডাউন শেষে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে দুদকের কার্যক্রমেও গতি আসছে। গত দুই মাসে আদালতে ২০টি মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২। একইসাথে পরিচালিত বেশ কয়েকটি এনফোর্সমেন্ট অভিযানে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
দুদক চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে বলেন, চলতি বছর লকডাউনের মধ্যে পুরনো কিছু অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলা তদন্তের নিয়মিত কিছু কার্যক্রম চলেছে। তবে এনফোর্সমেন্ট চালানো সম্ভব হয়নি। এখন লকডাউন উঠে যাওয়ায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে গত দুই মাসে প্রায় ২০টির মতো মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার সাবেক প্রায়োরিটি ম্যানেজার ইফতেখারুল কবিরের বিরুদ্ধে প্রায় ৬-৭টি মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এনসিসি ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল আহাদ চৌধুরী, কোতোয়ালী থানাধীন বজলুর রহমান ওয়াকফ এস্টেটের মোতোয়াল্লি আবু হাসনাত চৌধুরীর বিরুদ্ধেও আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিবিরহাটে রেলের সরকারি জায়গা দখল করার অভিযোগে ১০ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এদিকে গত ২৮ অক্টোবর দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের একটি অভিযোগে কক্সবাজার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। সম্প্রতি সজেকা-২ এর সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে দুদক টিম ফটিকছড়ি কৃষি ব্যাংকে ৪০ দিনের হতদরিদ্রদের কর্মসূচির টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করে। একইভাবে রাজস্ব ফাঁকির একটি অভিযোগে টেকনাফ স্থলবন্দরেও এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করেন তিনি।
এর আগে ১০ অক্টোবর পাসপোর্ট সেবা দিতে ঘুষ দাবির অভিযোগে নগরীর পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর একটি টিম। অভিযান পরিচালনাকালে দালালদের দৌরাত্ম্যের প্রমাণ পায় দুদক টিম। পাশাপাশি পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত পুলিশ ও আনসার সদস্যের সাথে দালালদের যোগসাজশও শনাক্ত করে।
এর আগে কলেজিয়েট স্কুলের উচ্চমান সহকারী মো. হাবিবুরের বিরুদ্ধে জাল সনদের মাধ্যমে সরকারি চাকরি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কলেজিয়েট স্কুলে এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করেন দুদক সজেকা-১ এর সহকারী পরিচালক ফকরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম। দুদক টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এখন কমিশন থেকে ধীরে ধীরে অভিযোগগুলো অনুসন্ধানের জন্য পাঠাচ্ছে। চট্টগ্রামে এ ধরনের অভিযোগের ফাইল আসা শুরু হয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কর্মকর্তাদের এনডোর্স করা হবে। তাছাড়া বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।