চট্টগ্রামে কমেছে এলএনজি সরবরাহ

করা হচ্ছে রেশনিং, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্ব

হাসান আকবর | সোমবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের একমাত্র উৎস এলএনজি রেশনিং করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আসার গতি কিছুটা স্লথ হওয়ায় এলএনজিতে রেশনিং করে সরবরাহ কমানো হয়েছে। অপরদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা অঞ্চলে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান কমানো হয়েছে। কিছুদিন আগেও মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হলেও গত কয়েকদিন ধরে তা ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নামিয়ে আনা হয়েছে। নতুন কার্গো না পৌঁছা পর্যন্ত এলএনজি রেশনিং অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে সরবরাহ কমার প্রথম ধাপে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪১০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা ২৫৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের যোগান দিতে পারে; যা চাহিদার মাত্র ৬২ শতাংশ। আবার এই গ্যাসের একটি বড় অংশের যোগান দেওয়া হয় আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট গ্যাসের চাহিদার অন্তত ২৫ শতাংশ এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহ দেওয়া হয়। অপরদিকে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪শ মিলিয়ন ঘনফুট। এখানে সরবরাহ দেওয়া হয় দৈনিক ২৮০ থেকে ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। চট্টগ্রামের গ্যাস চাহিদার পুরোটাই দেওয়া হয় আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে। সিলেট বা কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস চট্টগ্রামে আনার সুযোগ না থাকায় আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভরতা তৈরি হয়েছে।

দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হওয়ায় ক্রমে এলএনজি নির্ভরতা বাড়ছে। বিদেশ থেকে এলএনজি কিনে এনে তা মহেশখালীর দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি আসার ক্ষেত্রে কিছুটা স্লথ গতি তৈরি হয়েছে। ফলে নতুন কার্গো না আসা পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে সেগুলো রেশনিং করে সরবরাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের ন্যাশনাল গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়। এর একটি টার্মিনাল পরিচালনা করে আমেরিকান কোম্পানি এঙিলারেট এনার্জি ও অন্যটি দেশীয় কোম্পানি সামিট। দুটি টার্মিনাল কিছুদিন আগেও ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস দেয়া হলেও গত কয়েকদিন ধরে সরবরাহ ৭৫০ মিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে করে চট্টগ্রামে কয়েকদিন আগেও দৈনিক ৩১৬ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছিল। যেখান থেকে সিইউএফএলকে দেওয়া হতো দৈনিক ৪৫ থেকে ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় সিইউএফএলের গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে বাড়তি এলএনজি নিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে গরমের মৌসুম শুরু হওয়ায় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শুধু শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এলএনজির যোগান না বাড়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ শিল্প, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক খাতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়াসহ কিছুটা সংকট তৈরি হতে পারে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস ন্যাশনাল গ্রিডের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশে সরবরাহ হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর। এলএনজি আমদানিতে কোনো সংকট তৈরি হলে চট্টগ্রামের গ্যাসের যোগানে তার প্রথম ধাক্কা লাগে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছোট সাজ্জাদের ৭ দিনের রিমান্ড
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটপাত রাস্তায় ময়লা পেলে জেল-জরিমানা