বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের ৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকৌশলীদের বিভাগীয় মহাসমাবেশ। আজ ৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪ টায় প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে বিশাল এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, বিগত ছয়মাস ধরে প্রকৌশলীদের অধিকার আদায়ে ৩ দফা দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন করে আসছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে রংপুরের পর আজ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মহাসমাবেশ।
প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা আবারও তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেন।
উক্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খান আমিনুর রহমান, এইবি চট্টগ্রাম সেন্টারের সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম মোঃ সেলিম, ফোরাম অফ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস চট্টগ্রাম সেন্টারের সহ-সভাপতি মোঃ মমিনুল হক, চুয়েটসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আরো অনেকে।
চুয়েটের পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, “শেষ বছর শিক্ষার্থীদের কে যখন জিজ্ঞেস করা হয় পরবর্তী প্ল্যান কি, একটা বড় অংশ শিক্ষার্থী জানায় যে তারা দেশ ছেড়ে চলে যাবে। যথাযথ সুবিধা না পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। অন্য কোন সরকারি চাকরিতে এমন পদোন্নতির নিয়ম কেউ দেখতে পারবেন না। প্রকৌশল চাকরিতেই শুধু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়।”
ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি)-এর চট্টগ্রাম সেন্টারের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. মানজারে খোরশেদ আলম বলেন, “আমি খুব ব্যথিত অনুভব করছি, আমাদের তরুণ প্রকৌশলী ভাইদের ল্যাব, ক্লাস ছেড়ে অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে হয়েছে।দেশে যদি কোটা প্রথা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা হতো তাহলে এই পরিবেশ সৃষ্টি হতো না। প্রকৌশলীদের জায়গাগুলো, প্রকৌশলী নন এমন ব্যক্তিরা দখল করে নিচ্ছেন। শুধু আইবি চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের সকল প্রকৌশলী এই তিন দফা দাবির সাথে একমত পোষণ করেছে।
উক্ত সমাবেশে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো: সাকিবুল হক লিপু বলেন, ডিপ্লোমাধারীরা মূলত এইচএসসি সমমান, যারা পূর্বে টেকনিশিয়ান হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতো৷ কিন্তু তারা এক শতিশালী সিন্ডিকেট করে, ১০ম গ্রেডে ১০০% কোটা এবং ৯ম গ্রেডে ৩৩% থেকে শুরু করে ১০০% পর্যন্ত কোটা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর দখল করে রেখেছে। তাদের বিসিএসে বসার জন্য ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা (স্নাতক) না থাকলেও, কোনোরকম বিসিএস পরীক্ষা না দিয়ে তারা শুধুমাত্র প্রমোশনের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছে। তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠানোর কারণে আজ তারা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নাশকতার হুমকি দিচ্ছে, আমাদের বোনদের সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট, ধর্ষণের হুমকি ও আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: ইফতেখার মাহমুদ বলেন, আজকে বিএসসি প্রকৌশলরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উত্তীর্ণ হয়ে দেখছে, তাদের জায়গা দখল করে রেখেছে ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ানরা। এর চাইতে লজ্জার আর কি হতে পারে? অবৈধভাবে তারা দখল করে রেখেছে ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৮০ শতাংশ পদ। যেখানে বিএসসি আর বিসিএস দিয়ে ৯ম গ্রেডে ঢুকতে গিয়ে অজস্র বিনিদ্ররজনী কাটাতে হয় আমাদের, সেখানে অবৈধ কোটা নিয়ে ডিপ্লোমারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যতিরেকে প্রমোশন হাসিল করছে। হাতে কলমে ৩৩ শতাংশ থাকলেও বাস্তবে তা ৫০ শতাংশ ক্রস করেছে। আমরা জোরালোভাবে এই দাবি জানাচ্ছি যে, প্রকৌশল খাতের সংস্কার এখনই করতে হবে, অতি সত্তর করতে হবে।
উক্ত সমাবেশে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদ ইকবাল বলেন, ইঞ্জিনিয়ারদের ৩ দফা দাবি আদায়ের মাধ্যমে এদেশের প্রকৌশল খাতের মেরুদণ্ড গঠন হবে। নইলে এইচএসসি সমমান ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ভাইদের ব্যবহার করে যে সিন্ডিকেট এদেশকে দূর্বল করে রেখেছে তাদের হাতে এদেশ ধ্বংস হবে। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে। যদি এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরদের তাদের ইচ্ছামত প্রতিযোগিতার সুযোগ না দেওয়া হয় তবে বুয়েট কুয়েট চুয়েট রুয়েট, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ গুলো বন্ধ করে দেন। টেকনিশিয়ান দিয়ে প্রকৌশল খাত চালান।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত ৩ দফা দাবিসমূহ ছিল-নবম গ্রেডে নূন্যতম যোগ্যতা বিএসসি রেখে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ, দশম গ্রেডকে কোটামুক্ত করে বিএসসিদের জন্য সুযোগ করে দেয়া এবং বিএসসি ছাড়া যেন কেউ প্রকৌশলী পদবী ব্যবহার না করতে পারে তা নিশ্চিত করা।