ধান ও চালের বাজারে অবৈধ মজুদদারি ঠেকানো এবং মজুদের হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে সরকার। অথচ প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ফুড গ্রেইন (খাদ্যশস্য) লাইসেন্সের আওতায় আসেনি অধিকাংশ ব্যবসায়ী। লাইসেন্সের আওতায় না আসায় কোন ব্যবসায়ীর কাছে কী পরিমাণ ধান–চালের মজুদ আছে তা জানতে পারছে না জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়। এতে বাজারে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অবৈধভাবে ধান–চালের মজুদদারির প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিয়ম মতে, সকল ব্যবসায়ী ফুড লাইসেন্স নিয়ে প্রতি মাসে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে ধান–চালের মজুদের হিসাব দিতে বাধ্য থাকবেন। তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ফুড লাইসেন্স নিতে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে লাইসেন্স নিতে এখন কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের আওতায় এসেছেন। তবে গত এক বছর ধরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের নীরবতার সুযোগে অনেকে এখন লাইসেন্স নেয়া কিংবা নবায়ন করছেন না।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, আমার জানা মতে– আমাদের রাইচ মিল মালিকদের সবার কাছে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স আছে। তবে চালের আড়তদারদের অনেকে এখনো এই লাইসেন্সের আওতায় আসেনি। তবে বেশিরভাগের এই লাইসেন্স আছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস.এম নিজাম উদ্দিন বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আসলে এই লাইসেন্স নেয়ার জন্য খাদ্য বিভাগ থেকে কড়া কোনো নির্দেশনাও নেই। না হলে প্রজ্ঞাপন জারির এত বছর পরেও কেন ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স নিবে না। সবার কাছে এই লাইসেন্সটি থাকলে কার আড়ত ও গুদামে কী পরিমাণ চাল রয়েছে, তার হিসাব সরকারের কাছে থাকত।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ রিয়াদ কামাল রনি আজাদীকে বলেন, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নিতে আমরা ব্যবসায়ীদের বারবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি। অনেক ব্যবসায়ীরা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই লাইসেন্সটি নিয়েছে। তবে বেশিরভাগই নেয়নি। আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে– যারা এই লাইসেন্স নিয়েছেন, তারা নিজ দায়িত্বে প্রতি মাসে কী পরিমাণ ধান–চাল মজুদ আছে; সেটি হিসাব দেয়ার কথা থাকলেও, তারা আমাদের সেই হিসাবটি দিচ্ছে না। এছাড়া আমাদের নিজস্ব জনবল সঙ্কটের কারণেও আমরা পুরো বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে সেটি তদারকি করতে পারছি না।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৪ মে গেজেট জারি করে কী পরিমাণ খাদ্যশস্য কতদিন মজুদ রাখা যাবে তা নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। গেজেট অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্যশস্য বা খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখতে পারবেন না। এছাড়া আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং চাল কলের মালিকরা সরকার নির্ধারিত হারে ধান–চাল নির্ধারিত সময়ের জন্য মজুদ করতে পারবেন। অটোমেটিক, হাসকিং ও মেজর চাল কলের মালিকরা তাদের পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচগুণ ধান ৩০ দিনের জন্য মজুদ করতে পারবেন। অটোমেটিক ও মেজর চাল কলের মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দুইগুণ চাল এবং হাসকিং চাল কলের মালিকরা সর্বোচ্চ ১০০ মেট্রিক টন চাল ১৫ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। পাইকারি বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান বা চাল ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা ১৫ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ টন এবং আমদানিকারকরা আমদানিকৃত ধান বা চালের সবটুকু ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন।











