চট্টগ্রামের ৯৬৭ বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই হবে

জামুকার সুপারিশ ছাড়া অন্তর্ভুক্ত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ ছাড়া ‘বেসামরিক গেজেটে’ অর্ন্তভুক্ত তালিকায় চট্টগ্রাম জেলার ৯৬৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৮৭৮ জন এবং মহানগরে আছেন ৮৯ জন।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং মহানগর পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই তালিকার যাচাই-বাছাই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও শেষ মুহূর্তে এটা পেছানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার বেসামরিক গেজেটে জামুকার সুপারিশ ছাড়া অর্ন্তভুক্ত সারা দেশের ৩৯ হাজার ৯৬১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল।
এদিকে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে চার সদস্যের কমিটি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মহানগরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটির সভাপতি মনোনয়ন করবেন জামুকার চেয়ারম্যান। এছাড়া উভয় পর্যায়ে কমিটির সদস্য হিসেবে জেলা প্রশাসনও একজন করে প্রতিনিধি প্রেরণ করবেন। প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় সাংসদগণও একজন করে সদস্য প্রেরণ করবেন।
তবে সদস্য বাছাইয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রেরণের জন্য জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল গত ৭ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকদের পত্র দিয়ে অবহিত করেন। ওই পত্রে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর মনোনীত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ আজ রোববার সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক সদস্য মনোনয়নের শেষ দিন। অথচ গতকাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে তালিকা পৌঁছেনি। এমনকি জামুকা কর্তৃক মনোনীত সভাপতির নামও উপজেলা নির্বাহী অফিসার দপ্তরে পাঠনো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, কার্যক্রম চলছে। দুয়েকদিনের মধ্যে প্রতিনিধির নামের তালিকা উপজেলা পর্যায়ের পাঠিয়ে দিব।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, কমিটির সভাপতি মনোনয়ন করবে জামুকা। এখনো তাঁর নাম পায়নি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের তালিকা আগামীকাল (আজ) পাব। সংসদ সদস্যের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, তিনি মৌখিকভাবে একজনের নাম বলেছেন। কমিটি হয়ে গেলে পরবর্তী কাজ তেমন কঠিন হবে না। যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। তালিকায় যাদের নাম আছে তাঁরা স্বপক্ষে প্রমাণ আনবেন। কোন ধরনের সুপারিশ, অনুরোধ ও চাপকে আমরা আমলে নিব না। যেহেতু এটা স্পর্শকাতর বিষয় তাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে যাচাই-বাছাই কার্যকম পরিচালনা করবো।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফ্‌ফর আহমদ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, সকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভা হয়েছে। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ পিছিয়ে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ওয়েবসাইটে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখান থেকে ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় যাদের নাম আছে তাদের বাদ দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাল বার্তা ও ভারতীয় তালিকায় নাম থাকার পরও যাচাই-বাছাই তালিকায় নাম থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিব্রতকর।
জামুকা সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ এর ৭ (ঝ) ধারা অনুযায়ী ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন’ পূর্বক সরকারের নিকট সুপারিশ করার এখতিয়ার জামুকার উপর ন্যস্ত। সংস্থাটির ৭১ তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, জামুকার অনুমোদন ব্যতীত যে সকল বেসমরিক গেজেট প্রকাশিত হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপ্রেক্ষিতেই গত মঙ্গলবার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত তালিকায় চট্টগ্রামের রাউজানে ৫৪ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৬০ জন, সীতাকুণ্ডে ৫৪ জন, মীরসরাইয়ে ১৭৩ জন, পটিয়ায় ১০৪ জন, সন্দ্বীপে ১৮ জন, বাঁশখালীতে ৫১ জন, আনোয়ারায় ৩৪ জন, বোয়ালখালীতে ৮০ জন, চন্দনাইশে ২৩ জন, সাতকানিয়ায় ৮০ জন, লোহাগাড়ায় ২৫ জন, হাটহাজারীতে ৩৬ জন, ফটিকছড়িতে ৮৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের পর থেকেই এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম জামুকার সুপারিশ ছাড়া গেজেটভুক্ত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেফাজতে ইসলাম নতুন রাজাকার : জয়
পরবর্তী নিবন্ধজলবায়ু পরিবর্তন প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে তাগাদা প্রধানমন্ত্রীর