চট্টগ্রামের ৬০ মসজিদে হচ্ছে পাঠাগার

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২২ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মসজিদ পাঠাগার করছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে ‘মসজিদ পাঠাগার সমপ্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়)। ২৯ কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার টাকার প্রকল্পটির আওতায় দেশের ৫ হাজার মসজিদে বই ও বই সংরক্ষণের জন্য আলমারি এবং আড়াই হাজার মসজিদ পাঠাগারে বই দেয়া হচ্ছে। দুই ক্যাটাগরিতে এ প্রকল্পে রয়েছে চট্টগ্রামের ৬০টি মসজিদও।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলার ৩৭টি মসজিদে বই ও বই সংরক্ষণের জন্য স্টিলের আলমারি দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নগরের মসজিদ আছে ৭টি। বাকি ৩০টি মসজিদ রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। এছাড়া ২৩টি মসজিদে দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র বই। ওই মসজিদগুলোতে পূর্বে আলমারি দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বইয়ের মধ্যে ইসলামি গ্রন্থের পাশাপাশি দর্শন, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণিত, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে। এসব বইয়ের মূল্য ২০ হাজার ২৯০ টাকা। এর মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনার ১২ হাজার ৫ টাকার এবং বাইরের প্রকাশনার ৮ হাজার ২৮৫ টাকার বই রয়েছে। চট্টগ্রামের মসজিদগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত বই ও আলমারি বিতরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. আবদুল মতিন সরকার আজাদীকে বলেন, প্রায় সবগুলো মসজিদে আলমারি ও বই বিতরণ করা হয়েছে। বৃস্পতিবার পর্যন্ত তিনটি ছাড়া বাকি সব মসজিদে আলমারি বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ কর্মকর্তা বলেন, পাঠাগারে প্রদত্ত পবিত্র কোরআনের তাফসীর গ্রন্থ, হাদীস গ্রন্থ, নবী রাসুলগণের জীবনী, সাহাবা আজমাইনগণের জীবনী, শিশুকিশোরদের উপযোগী ইসলামী পুস্তক, যৌতুক বিরোধী পুস্তক, মাদক বিরোধী পুস্তকসহ বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ ও তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাবেন মসজিদের মুসল্লী এবং মসজিদ এলাকার বাসিন্দারা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে মীরসরাই উপজেলার ২টি মসজিদে, সীতাকুণ্ড উপজেলার ২টি মসজিদে, হাটহাজারী উপজেলার ৫টি মসজিদে, রাউজান উপজেলার ৪টি মসজিদে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৩টি মসজিদে, সন্দ্বীপ উপজেলার ২টি মসজিদে, পটিয়া উপজেলার ২টি মসজিদে, আনোয়ারা উপজেলার ৩টি মসজিদে, সাতকানিয়া উপজেলার ২টি মসজিদে, লোহাগড়া উপজেলার ১টি মসজিদে, চন্দনাইশ উপজেলার ২টি মসজিদে, বোয়ালখালী উপজেলার ১টি মসজিদে, বাঁশখালী উপজেলার ১টি মসজিদে বই ও আলমারি দেয়া হয়।

আলমারির সঙ্গে দেয়া বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেকুরআন মজীদ (আরবী), কোরআন শরীফ (বাংলা উচ্চারণ ও সহজ সরল অনুবাদসহ শানে নুযুল ও প্রয়োজনীয় টিকাও রয়েছে), বুখারী শরীফ, তাফসীরে মারেফুল কুরআন, রিজল শাস্ত্র জাল হাদিসের ইতবৃত্ত, তাফসীরে রুহুল মানী, আবু দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি, জামউল ফাওয়ায়েদ, তাফসীরে মাযহারী, মিফতাহুল জান্নাত, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম মনীসীদের জীবনী, ইসলামের আলোকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, গণিতজ্ঞান, আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁসমুরগি পালন এবং চিকিৎসা, যুগ বদলের বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রকতি ও চিকিৎসা বিজ্ঞান, হজ ও ওমরার দর্শন, আল কোরআনের ১০০ উপদেশ এবং ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ।

আলমারি ও বই পাওয়া রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের পূর্ব রূপচাঁন্দ নগর বায়তুল ইকরাম জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল কাদের আজাদীকে বলেন, সাধারণত গ্রামে পাঠাগার তেমন একটা হয় না। ওই জায়গা থেকে চিন্তা করলে মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার করার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। পাঠাগার হওয়ায় এলাকার লোকজন বিশেষ করে যারা বয়স্ক আছেন তারা অবসর সময়ে পছন্দের পুস্তক পড়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবেন। কোরআন, হাদীস ও তাফসীরের যে পুস্তক দেয়া হয়েছে তা সত্যিকার অর্থেই মসজিদের আবহের সঙ্গে যায়। অন্যান্য গ্রন্থগুলোও মানুষের জানার পরিধিকে সমৃদ্ধ করবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, মসজিদ পাঠাগার সমপ্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের মুসলিম জনগণের ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন, পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নতুন পাঠাগার স্থাপন করা। এছাড়া বিদ্যমান পাঠাগারে পাঠ সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে নতুন নতুন পুস্তক সংযোজন করা। তৃতীয় পর্যায়ের তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রয়েছে।

ইসলমিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদ পাঠাগার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। ওই বছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৩২ হাজার ৭৪২ টি নতুন পাঠাগার স্থাপন, ২০ হাজার ৪২৫টি বিদ্যমান পাঠাগারে পুস্তক পুনঃসংযোজন, ৬৪টি জেলায় একটি করে মডেল মসজিদ পাঠাগার স্থাপন এবং ৪৭৭ টি উপজেলায় ৪৭৭টি উপজেলা মডেল পাঠাগার স্থাপন করা হয়। পুস্তক সংরক্ষণের জন্য ১১ হাজার ৩৫০টি আলমারি মসজিদ পাঠাগার স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে এ সকল স্থাপিত পাঠাগারে সরবরাহ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারে ৪ হাজার প্রার্থীর নিয়োগে আইনি বাধা কাটল
পরবর্তী নিবন্ধরিজেন্টের সাহেদের ৩ বছর কারাদণ্ড