বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে দেশের ৩৩০ পৌরসভার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের প্রথম কিস্তি বাবদ ৮৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ পৌরসভা পেয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ছাড়কৃত অর্থ দেয়া হয়েছে অনুদান হিসেবে, যা পৌর এলাকায় উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে ৫০ শতাংশ সবগুলো পৌরসভায় সমহারে দেয়া হয়। বাকি ৫০ শতাংশকে আবার ১০০ ভাগ ধরে পৌরসভার আয়তন, জনসংখ্যা, রাজস্ব আয় এবং জলবায়ু বিপদাপন্ন সূচক হিসেবে ছাড় করা হয়। এক্ষেত্রে পৌরসভার আয়তনের বিপরীতে ২৫ শতাংশ, জনসংখ্যার বিপরীতে ৩৫ শতাংশ, রাজস্ব আয়ের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং জলবায়ু বিপদাপন্ন সূচকের বিপরীতে ২০ শতাংশ হারে ছাড় করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে দেশের পৌরসভাসমূহের জন্য উন্নয়ন সহায়তা খাতে চলতি ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ৪৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাধারণ বরাদ্দ উপখাতে রক্ষিত আছে ৩৪৪ কোটি ৫০ টাকা লাখ টাকা। মূলত সাধারণ বরাদ্দ উপখাত থেকেই ৮৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় করা হয়। এ বিষয়ে গত মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন দাপ্তরিক পত্র দেন একই বিভাগের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি পৌরসভা ‘ক’, পাঁচটি পৌরসভা ‘খ’ এবং একটি পৌরসভা ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান ও মীরসরাই। খ’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী ও দোহাজারী। ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভাটি নাজিরহাট। উল্লেখ্য, দোহাজারী পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত ছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এ পৌরসভাকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এদিকে ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ‘ক’ শেণিভুক্ত পৌরসভাগুলো ২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ‘খ’ শেণিভুক্ত পৌরসভাগুলো ১ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা পেয়েছে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
এর মধ্যে পটিয়া পৌরসভা পেয়েছে ২৭ লাখ ১২ হাজার টাকা, বারইয়ারহাট পৌরসভা ১৯ লাখ ৩ হাজার টাকা, সীতাকুণ্ড পৌরসভা ২৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, সাতকানিয়া পৌরসভা ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা, বাঁশখালী পৌরসভা ২৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, চন্দনাইশ পৌরসভা ২৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা, হাটহাজারী পৌরসভা ৩১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, রাউজান পৌরসভা ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, মীরসরাই পৌরসভা ২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ২১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, সন্দ্বীপ পৌরসভা ২৭ লাখ ৮ হাজার টাকা, বোয়ালখালী পৌরসভা ৩০ লাখ ৫২ হাজার টাকা, ফটিকছড়ি পৌরসভা পেয়েছে ২৭ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং নাজিরহাট পৌরসভা পেয়েছে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন জানান, মঞ্জুরীকৃত অর্থ কোনো অবস্থাতেই পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না। বিএমডিএফের ঋণের কিস্তিও এ অর্থে পরিশোধ করা যাবে না। একইসঙ্গে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারীকৃত পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পৌরসভার প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাগণ যৌথভাবে মঞ্জুরীকৃত অর্থের আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর–২০০৮ (সর্বশেষ সংশোধনীসহ) অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি–বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট বিল উত্তোলনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।