চট্টগ্রামের সবগুলো আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে আসামিদের রাখা লোহার খাঁচা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে আসামিদের আর খাঁচার মধ্যে দাঁড়াতে হবে না। বাদী ও সাক্ষী যে রূপ মুক্তভাবে ডকে দাঁড়ায় আসামিও একই রকম ডকে দাঁড়াবেন।
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে লোহার খাঁচা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু সিএমএম আদালত নয়, সিজেএম, মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ চট্টগ্রামের সবগুলো আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে আসামিদের রাখা লোহার খাঁচা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এজলাস কক্ষ থেকে আসামিদের রাখা লোহার খাঁচাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিএমএম আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, আগে লোহার খাঁচা ছিল। আসামিরা সেখানেই দাঁড়াতেন। এখন থেকে আর খাঁচায় কাউকে দাঁড়াতে হবে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে খাঁচাগুলো সরানো হয়েছে। বাদী ও সাক্ষীর ডকের সাথে আসামিদের রাখা ডকের আর কোন পার্থক্য নেই বলেও জানান তিনি।
গতকাল চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি আদালতে গিয়ে দেখা যায়, আসামিদের রাখা লোহার খাঁচা আগের মতো নেই। খাঁচার মতো দেখতে লোহার গ্রিল বের করে ফেলা হয়েছে। রয়েছে শুধু বুক পরিমাণ সমান একটি গ্রিল। বাকী অংশ খোলা অবস্থায় রয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, লোহার খাঁচার মধ্যে আসামি রাখা অমানবিক ও সংবিধান পরিপন্থী। সভ্য দেশে লোহার খাঁচা থাকতে পারে না। সংবধিানে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্চনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও আদালতের এজলাস কক্ষে আসামিদের রাখা লোহার খাঁচা বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আসামির সাথে সব রকম নিষ্ঠুরতা বা লাঞ্চনাকর ব্যবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন বলেও জানান আইনজীবীরা। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আসামিদের রাখা লোহার খাঁচা অবশ্যই অমানবিক ও সংবিধান পরিপন্থী। মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল খাঁচাগুলো। এখন খাঁচাগুলো সরিয়ে নেওয়াতে ভালো হয়েছে। বাদী ও সাক্ষীর ডকের সাথে আসামিদের রাখা ডকের আর পার্থক্য থাকল না। সবাই সমান। আসামিকে কেন্দ্র করে সব রকম অমানবিক, যন্ত্রণাদায়ক ব্যবস্থার অবসান হওয়া প্রযোজন বলেও জানান আইনজীবী মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।