চট্টগ্রাম–১১ আসনে সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেছেন, আগামী দিনে বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে হলে আমাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় ডিজিটাইজেশন করতে হবে।
বুয়েটের নতুন নতুন ইনোভেশনগুলো ব্যবসায়ীদের সাথে শেয়ারের মাধ্যমে ব্যবসায় নতুনত্ব আনতে হবে। এতে যারা উদ্ভাবনের সাথে জড়িত তারাও অনুপ্রাণিত হবে। এক্ষেত্রে বুয়েট চট্টগ্রামের তরুণ ব্যবসায়ীদের প্রযুক্তিগত প্রায়োগিক ও শিল্পমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের ব্যবসায়ীদের দক্ষতাও বাড়বে পাশাপাশি সৃষ্টি হবে দক্ষ মানবসম্পদও।
গতকাল বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (সিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স (বিসিই)’র মধ্যে আয়োজিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি এই সমঝোতা স্মারক পরবর্তী নিয়মিত তত্ত্বাবধান এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমঝোতা স্মারকের আওতায় বুয়েট বিভিন্ন ধরনের সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করবে এবং ব্যবসায়ীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।
বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বুয়েট থেকে পাশ করাদের ৮০ শতাংশ মেধাবী দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাকি ২০ শতাংশ দেশে থাকছে। গুগুল, মাইক্রোসফট ও ইউটিউবের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বুয়েটিয়ানরা কাজ করছে। বুয়েটের উদ্দেশ্য কিন্তু সেটি ছিল না। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সব বুয়েটিয়ান দেশের উন্নয়নে কাজ করবেন। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। আবার আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা ইনোভেটিভ কাজ করতে চান। সেই ইনোভেটিভ কাজের সুযোগটা পেলে তারা দেশের বাইরে যাবেন না। তখন আমেরিকা তাদের নিতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছেন, কমার্স কিন্তু এখন কমার্স নাই। এখন ই–কমার্স হয়ে গেছে। ট্রেড এখন ই–ট্রেড হয়ে গেছে। সবখানে ই চলে আসছে। এখন ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি চলে আসছে।
তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে আমেরিকার সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা এসেছিলেন। তাদের সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে ঢাকায়। কারা তৈরি করছে, বুয়েটিয়ানরা তৈরি করছে। আমি শুনে অবাক হলাম, তারা ২০০৬ সাল থেকে এখানে কাজ করছে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বিদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি যদি তুমি আমার দেশে করতে চাও, করো। তবে বাইরে থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনতে পারবে না। ইঞ্জিনিয়ার আমাদের থেকে নিতে হবে। আমাদের সেই পলিসি দরকার। আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি গড়তে কেন বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার আসবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেক্সট ভিশন হচ্ছে–স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের দেশের লোক আমেরিকায় বসে সাপোর্ট দিচ্ছে গুগলকে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, আমাদের উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা উন্নত করার পাশাপাশি নতুন পণ্যের ধারণা ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপ বিকাশের প্রμিয়া আপগ্রেডের জন্য আমাদের গভীর গবেষণা এবং প্রযুক্তির একীভূতকরণ প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী যে, বুয়েট চিটাগাং চেম্বারের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে চট্টগ্রামের বেসরকারী খাতগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মানানসই নতুন উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসবে।
সমঝোতা স্মারকে বুয়েটের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, চিটাগাং চেম্বারের পক্ষে সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স (বিসিই)’র পক্ষে ট্রেজারার সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ, চেম্বার পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি আবিদা মোস্তফা, পিএইচপি মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আক্তার পারভেজ। অনুষ্ঠানে বুয়েটের গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার বুয়েটের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।