রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দিয়েছে, যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করেন, তাহলে আল্টিমেটাম ছাড়াই বঙ্গভবন ঘেরাও করা হবে। এখন আর ২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা আলটিমেটাম দেওয়া হবে না। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনে এই সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান। তারা বলেন, আমরা আর কোনো আল্টিমেটাম দেব না। যেকোনো সময় বঙ্গভবন ঘেরাও করব। ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে রয়েছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, এই বাংলায় ফ্যাসিবাদের ঠাঁই হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ নিতে গতকাল বিকাল ৪টা থেকে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী ষোলশহর রেল স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে জিইসি মোড় পর্যন্ত আসেন এবং জিইসি মোড় ঘুরে ষোলশহরে শেষ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমরা ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করেন, তাহলে আল্টিমেটাম ছাড়াই বঙ্গভবন ঘেরাও করা হবে। এখন আর ২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আপনারা এখনো দেশের আনাচে কানাচে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন। আপনারা হুঁশিয়ার হয়ে যান। আপনাদের জায়গা এই বাংলার মাটিতে হবে না। তিনি বলেন, এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের হাতে, যুবলীগের হাতে, ছাত্রলীগের হাতে আমার ভাইয়ের রক্তের দাগ লেগে আছে। এই দাগ নিয়ে তাদেরকে আমাদের সোনার বাংলায় রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের দোসর চুপ্পু এখনো গদিতে বসে আছেন। আমরা এখন আর কোনো আল্টিমেটাম বেঁধে দিতে চাই না। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ চুপ্পু পদত্যাগ না করেন তাহলে আল্টিমেটাম ছাড়া বঙ্গভবন ঘেরাও করা হবে।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাফি বলেন, আমরা দেখছি সন্ত্রাসী লীগ এখনো বাংলাদেশের আনাচে–কানাচে মাথাচাড়া দিচ্ছে। তোমরা এখনো হিসেব বুঝনি। আমরা তোমাদের গর্ত থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তোমরা গর্ত থেকে বের হলেই তোমাদের ধরা হবে। পালানোর জায়গা পাবে না।
সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গ টেনে রাফি বলেন, গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। আমরা কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ঐক্য দেখেছি। সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রিয়াজুর রহমান সমাবেশে বলেন, এ দেশে স্বৈরাচারের দোসরদের থাকতে দেওয়া যাবে না। স্বৈরাচারের কোনো রাষ্ট্রপতি আমরা চাই না। এই রাষ্ট্রপতি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর আমলাদের টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রপতির কারণে স্বাধীনতার এতদিন পরও স্বৈরাচারের আমলাদের ধরা যায়নি। আমরা বিপ্লবী সরকারের স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখিয়েছে। আমার ভাইয়ের রক্তের বিচার তারা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমরা আমাদের ভাইয়ের রক্তের বিচার চাই। বাংলার মাটিতে একদিন খুনিদের বিচার হবে।