বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দেওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে কক্সবাজারের ঈদগাঁও ও চকরিয়া উপজেলা সমাবেশ করতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি। চকরিয়ায় পথ সমাবেশ করার জন্য একটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া সেই স্থানের আশপাশের রাস্তায় ডিভাইডার ভাঙচুর করতে দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই উপজেলায় সমাবেশ করতে না পেরে এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজার থেকে বান্দরবান চলে যান।
বিডিনিউজ জানায়, জুলাই পদযাত্রার ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল কক্সবাজারে সমাবেশ করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। দুপুরে কঙবাজারের শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আগে আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কঙবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন। তিনি ঘের দখল করছেন; মানুষের জায়গা জমি দখল করছেন; চাঁদাবাজি করছেন।
এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ শেষ করে কঙবাজার ছাড়ে এনসিপির গাড়িবহর। যাত্রাপথে সমাবেশ করার কথা ছিলো ঈদগাঁও উপজেলায়। সেখানে বিএনপির তোপের মুখে সমাবেশ না করেই চলে যান এনসিপির নেতাকর্মীরা।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, এর জের ধরে নিজ নির্বাচনী এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়ায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমনকি কঙবাজার পদযাত্রা শেষে পথিমধ্যে চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁও ও চকরিয়ায় পথসভা করার কথা থাকলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে পথসভা না করে সেনাবাহিনী ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এনসিপির নেতৃবৃন্দের গাড়িবহর চকরিয়া পৌরশহর অতিক্রম করে।
চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গার জনতা মার্কেট চত্বরে এনসিপি চকরিয়া শাখার আয়োজনে পথসভা করার জন্য ট্রাকের উপর পথসভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিন্তু সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সেই মঞ্চ ভাঙচুর করে। এ সময় আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা দ্রুত সরে যান। এ সময় ছাত্রদল নেতা শাহাদাত নোমান অভিসহ ছাত্রদল, যুবদলের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
এই ঘটনার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি এবং অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে ফের বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সেই মিছিল এসে জড়ো হয় এনসিপির নির্ধারিত পথসভা মঞ্চের স্থানে। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক, সদস্য সচিব এম মোবারক আলী, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরায়েজী, এম আবদুর রহিম, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ এম ওমর আলী।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেন, কঙবাজারে এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছি। এই বক্তব্যের জন্য নাসীরুদ্দীনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আমরা তাকে চকরিয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
চকরিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
জেলা ছাত্রদল নেতা ফাহিমুর রহমান বলেন, সালাউদ্দিন আহমদ সারা বাংলাদেশের অহংকার। আর তার নামে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ কঙবাজারের চকরিয়া–পেকুয়া সংসদীয় আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৬–২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে সংসদ সদস্য হন তার স্ত্রী হাসিনা আহমদ। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সন্ধান পায়। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১১ আগস্ট প্রায় ৯ বছর পর দেশে ফিরে আসেন বিএনপি সরকারের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।