চকরিয়া-পেকুয়ায় সাড়ে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ

মিঠা পানির প্রবাহ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২ মার্চ, ২০২৪ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় ২৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তম্মধ্যে পৌরসভাসহ চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর ও পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আবাদি জমির পরিচর্যাসহ নানা আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষাধিক কৃষক পরিবার। দুই উপজেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা যাতে অর্জিত হয় সেজন্য মাঠপর্যায়ে প্রতিটি ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নানা পরামর্শসহ সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তালিকাভুক্ত প্রান্তিক কৃষকদের সার, বীজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রণোদনা হিসেবেও দেওয়া হয়েছে আগেভাগে। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বোরো আবাদের ধানের চারা রোপণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে দুই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার আবাদী জমিতেও।

চকরিয়া উপজেলার প্রান্তিক কৃষক এবং কৃষিবিভাগ জানায়, পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা ও পালাকাটারামপুর পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত রাবার ড্যামের মাধ্যমে ধরে রাখা নদীর মিঠাপানির সরবরাহ দিয়ে বোরো আবাদসহ রকমারী সবজির চাষাবাদ চলছে। মিঠাপানির প্রবাহ এবং আবহাওয়া অনুকূলে পাওয়ায় এবারও বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার ভোলাখালের উপর স্থায়ীভাবে নির্মিত গোঁয়াখালী রাবার ড্যাম এবং টৈটং খালের উপর নির্মিত অস্থায়ী ক্রস বাঁধের ফুলানো পানি এবং মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা রাবার ড্যামে আটকানো মিঠাপানি দিয়ে পেকুয়া উপজেলার বোরো আবাদও সম্পন্ন হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা ও উপজেলার হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, কাকারা, সুরাজপুরমানিকপুর, বমু বিলছড়ি, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, চিরিংগা, সাহারবিল, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, পেকুয়া উপজেলার টৈটং, বারবাকিয়া, শিলখালী, রাজাখালী, মগনামা, উজানটিয়া ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নে বোরো আবাদের অধীনে রোপন করা হয়েছে ব্রিধান ২৮, ব্রিধান ৫৮, ব্রিধান ৬৭, ব্রিধান ৭৪, ব্রিধান ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৯, বঙ্গবন্ধু১০০ ও বীনা১০ এবং হিরা, সিনজেন্টা, এসিআই ব্রাকের হাইব্রিড জাতের ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে উফসি জাতের ধানের ফলন বেশি হওয়ায় এবারও সেই জাতের ধানের আবাদ বেশি পরিমাণে হয়েছে দুই উপজেলায়। এই তথ্য জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষিবিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে।

চকরিয়ার হারবাংয়ের পূর্ব বৃন্দাবনখিল গ্রামের কৃষক সালেহ আহমদ বলেন, নিজের ৫ একর জমিতে শ্রমিক দিয়েই ধানের চারা রোপণ করেছেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় মিঠাপানির সরবরাহ করা বেশ কষ্টকর। তাই সেচ টিউবওয়েল দ্বারা জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে প্রতি কানি (৪০ শতাংশ) জমিতে সেচ বাবদ খরচ পড়েছে ২৫০০ টাকা।

কোনাখালীর কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমের শেষদিকে হলেও মাতামুহুরী নদীতে রাবার ড্যাম দিয়ে আটকানোর কারণে মিঠাপানির যথেষ্ট উপস্থিতি রয়েছে। এতে কৃষকেরা নির্বিঘ্নে বোরোর আবাদ সম্পন্ন করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, প্রতিবছরের মতো চকরিয়ার ১৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো আবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক তদারকি ও প্রণোদনার মাধ্যমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আমাদের আশা।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় বলেন, নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ বৃদ্ধি ও আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এতে বোরো আবাদে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষকও লাভবান হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদার পাড় কাটায় ১ জনকে কারাদণ্ড, ২টি ডাম্প ট্রাক জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধবাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়