চকরিয়ায় মাটির প্রলেপে ঢাকা দুই আঞ্চলিক সড়ক

যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ১৮ মে, ২০২৪ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ায় ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে লুটের মহোৎসব চলছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে মাটি খেকোদের এই দৌরাত্ম্য। প্রতিদিনই এক্সেভেটর দ্বারা ফসলি জমির মাটি ডাম্পার ট্রাকযোগে পরিবহনের সময় আঞ্চলিক সড়কের ওপর গিয়ে পড়ছে। এতে কয়েক ইঞ্চি পুরুত্বের মাটির প্রলেপ পড়ে ঢাকা পড়ে গেছে বিটুমিনের পুরো সড়ক। ফলশ্রুতিতে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই মারাত্মক পিচ্ছিল হয়ে উঠে। এতে মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপকূলীয় চকরিয়াবদরখালীমহেশখালী আঞ্চলিক সড়ক ও আনোয়ারাবাঁশখালীচকরিয়া আঞ্চলিক সড়কের চকরিয়া অংশে দীর্ঘদিন ধরে এই নৈরাজ্য চলছে। চকরিয়াবদরখালীমহেশখালী সড়কের চকরিয়ার সাহারবিল থেকে পশ্চিম বড় ভেওলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং এবিসি সড়কের চকরিয়ার লালব্রিজ থেকে পেকুয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের ওপর প্রলেপ পড়ে রয়েছে মাটির। এতে সামান্য বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে সংঘটিত হবে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কৃষিবিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এসব বিষয় দেখভালের কথা থাকলেও তারা এই বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। সড়কের এই বেহাল অবস্থা রোধে তাদের কোনো তৎপরতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে করে মাটি খেকো চক্র প্রতিদিনই ডাম্পার ট্রাকযোগে মাটি পরিবহন অব্যাহত রেখেছে। চকরিয়ামহেশখালী সড়কের চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের লালব্রিজ স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী কলিম উল্লাহ ও মোহাম্মদ সাকের বলেন, সম্প্রতি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার পরই মারাত্মকভাবে পিচ্ছিল হয়ে উঠে সড়কটি। এতে যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এমনকি যাত্রীবাহী একটি বাস সড়ক থেকে অপেক্ষাকৃত সামান্য উঁচু সেতুর ওপর উঠতে গিয়েই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সড়কের পাশে খাদে আটকে যায়। এরকম অসংখ্য দুর্ঘটনার সাক্ষী ওই স্টেশনের ব্যবসায়ীরা।

সড়ক দুটির এই করুণ অবস্থায় বেশি সমস্যায় নিপতিত হচ্ছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। চলন্ত অবস্থায় গতি একটু বাড়ানোর চেষ্টা করলেই মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চকরিয়ামহেশখালী সড়কে যানবাহন চলাচল এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েক ইঞ্চি পুরুত্বের মাটির প্রলেপ পড়ে বিটুমিনের এই সড়ক একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে সকল ধরনের যানবাহন।

এই সড়ক দুটির সিএনজি টেক্সি চালক জালাল উদ্দিন, মনু মিয়া ড্রাইভারসহ বেশ কয়েকজন চালক বলেন, প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক দুটিতে মাটি খেকোদের নৈরাজ্য চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো ধরনের তদারকি বা নজরদারি নেই। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা।

সড়ক দুটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকের ভাষ্য, একদিকে চলতি মৌসুমে মাঠে উৎপাদিত লবণ পরিবহনের সময় ট্রাক থেকে নিঃসৃত হচ্ছে লবণ পানি। তার ওপর উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমির পলিমাটি কেটে ডাম্পার ট্রাকযোগে পরিবহনের সময় সড়কের ওপর পড়ছে মাটি। এতে লবণ পানি ও পলি মাটির আস্তরণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়ক দুটি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জরুরি এবং কঠোর পদক্ষেপ না নিলে সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে সড়ক দুটি দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণসহ যানবাহনগুলোর জন্য। কারণ সামনে শুরু হবে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে যানবাহন চলাচল।

সড়ক দুটির দেখভালসহ নৈরাজ্য রোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী দিদারুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় আঞ্চলিক সড়ক দুটির বড় সমস্যা হচ্ছে মাটি এবং লবণ পরিবহন। লবণ পরিবহনের সময় ঘন পুরুত্বের পলিথিন ব্যবহারের নিয়ম মানা হয় না। অপরদিকে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ডাম্পারভর্তি করে পরিবহনের সময় গিয়ে সড়কের ওপর পড়ছে মাটির আস্তরণ। এতে প্রতিনিয়তই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, এই সমস্যা থেকে উত্তরণকল্পে শুধুমাত্র সড়ক বিভাগ উদ্যোগী হলে হবে না। এখানে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পুলিশ থেকে শুরু করে সর্বোপরি পরিবহন মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ব্যস্ততম আঞ্চলিক সড়ক দুটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যারা কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে অন্যত্র পরিবহনের সময় সড়কের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্য, আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ
পরবর্তী নিবন্ধখুরুশকুলে মৎস্যঘেরে দুই জেলের মরদেহ