কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপকূলের চিংড়ি জোনে সশস্ত্র–ডাকাত সন্ত্রাসীদের অপরাধকর্ম অব্যাহতভাবে চলছে। সর্বশেষ ৩০ একর বিশিষ্ট একটি চিংড়ি ও লবণ উৎপাদন প্রকল্পে চারদিক থেকে সন্ত্রাসীরা হানা দিয়ে প্রথমে উপর্যুপুরি গুলি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এর পর সেখান থেকে উৎপাদিত ২০০০ মণ লবণ, কয়েক লাখ টাকার মাছ, জালসহ ঘেরে রক্ষিত অন্তত ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। শুধু তাই নয়, এই ঘেরে বোটে বোঝাই ১০০০ মণ লবণ বোটসহ অজ্ঞাত মাঝি এবং দুই শ্রমিককে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এর পর ঘের মালিকের কাছে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় জিম্মি বোট মাঝি ও দুই শ্রমিককে হত্যার হুমকি দেয়। গত শনিবার বিকেলে সশস্ত্র–ডাকাত সন্ত্রাসীরা ওই ঘেরে হানা দেয়। এর আগেও তারা একবার হানা দিয়েছিল।
ঘের মালিকদের পক্ষে গতকাল রবিবার দুপুরে চকরিয়া থানায় গিয়ে ভুক্তভোগী পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের মধ্যম–পশ্চিম পাড়ার দরবেশ কাটা গ্রামের মৃত জাবের আহমদের ছেলে নুরুল হোছাইন ওসির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। ওসি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের জিম্মিদশা থেকে বোট মাঝি ও দুই শ্রমিককে উদ্ধার করা যায়নি বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ঘের মালিক নুরুল হোছাইন বলেন, রামপুর মৌজায় বন্দোবস্তিমূলে তারা ২০ জনের নামে উপরোক্ত ৩০ একর চিংড়ি চাষের জমি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেন। এর পর থেকে তারা ওই জমিতে চিংড়ি ও লবণ উৎপাদন করে আসছেন। কিন্তু করাইয়াঘোনার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বেলালের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদল ২০ জনের বন্দোবস্তিকৃত ৩০ একরের প্রকল্পটি জবর–দখলের চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। ওই সময় তারা ঘেরে উৎপাদিত প্রায় ৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ২০০০ মণ লবণ, প্রায় ৬ লক্ষ টাকার উৎপাদিত মাছ, অসংখ্য জালসহ ঘেরে রক্ষিত আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
ঘের মালিক নুরুল হোছাইন আরও বলেন, সশস্ত্র ডাকাত–সন্ত্রাসীদের আগের লুটপাটের পর ঘের মালিকেরা নতুন করে লবণ উৎপাদন শুরু করেন। তারা প্রায় ১০০০ মণ লবণ উৎপাদন করেন। সেই লবণ নিয়ে আসার জন্য ঘের মালিক একটি বোট, বোটের মাঝি ও দুইজন শ্রমিককে ঘেরে পাঠান। কিন্তু নতুন করে গত শনিবার বিকেলে আগের কায়দায় সশস্ত্র–ডাকাত সন্ত্রাসীরা আবারও হানা দেয়। তারা মজুদকৃত লবণ, বোট মাঝি ও দুই শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর পরই একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাদীর দাবি সঠিক কী–না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ জিম্মি বোট মাঝি ও দুই শ্রমিককে উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’
চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার এম এম রকীব উর–রাজা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চিংড়ি ঘের থেকে অপহরণ করার অভিযোগের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে জিম্মিদের উদ্ধারে।’