ছেলেবেলায় গরুকে নিয়ে অনেক রচনা লিখেছি। এই গো–রচনার স্মৃতি আমৃত্যু অম্লান থাকবে। কিন্তু আমার অতি প্রিয় প্রাণী ছিল ঘোড়া। এখনো তাই। বলতে লজ্জা হয় যে, আমার ঘোড়া জ্ঞান এতো কম যে শত চেষ্টা করলেও ঘোড়া রচনা লিখতে পারবো না। স্কুলে শিক্ষকরা সবসময় গরু রচনাই লিখতে বলতেন। সে সময় বোম্বে (অধুনা মোম্বে) ফিল্মের নায়কদের ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করতে দেখে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, স্বপ্নে দেখতাম আমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে তরবারি হাতে যুদ্ধ করছি। বাল্য শিক্ষার ‘ঘোড়ায় চড়িল আছাড় খাইল’ কথাটা আমার মনে একবারে গেঁথে রয়েছে। তৈমুর লঙ বীর সেনানী হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন খোঁড়া পায়ে যুদ্ধ করে। ‘লঙ’ মানেই তো খোঁড়া। তরুণ বয়সে ঘোড়া চড়া আমি শিখেছিলাম, আছাড়ও খেয়েছি। তবে পা ভাঙ্গেনি। ভাঙ্গলে হয়তো আমার নামের সাথেও যুক্ত হতো লঙ কথাটা। আজকাল ‘সী বীচে’ দেখি টাকার বিনিময়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ায়। এসব ঘোড়া টগবগিয়ে দৌড়ায়না। সবাই ছবি তুলবার জন্যেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে। আমি এই প্রবীণ বয়সে একবার ‘সী বীচ’–এ গিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়েছিলাম। ঘোড়াকে ছুটাবার কৌশল জানতাম বলে আমার ঘোড়া ছুটে চলল। প্রবীণ এক ব্যক্তির এই পাগলামি দেখে অনেকে হেসেছিল। কেউ কেউ আবার ছবিও তুললো। একজন সাংবাদিক আমার সাক্ষাৎকার নিলেন। বললেন আপনাকে নিয়ে একটা ফিচার লিখবো। পত্রিকায় উঠবে।
শৈশব হতে ‘ঘোড়ার ডিম’ কথাটা শুনে আসছি। এই প্রবাদসম কথাটি উদ্ভবের নিশ্চয়ই একটা ইতিহাস রয়েছে। রূপকথায় পক্ষীরাজ ঘোড়ার কথা পড়েছি। এ ঘোড়ার পাখা ছিল। আকাশে উড়তে পারতো। রাজপুত্ররা পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভ্রমণ করতেন। আমার কেন যেন মনে হয় কোনো এক সময় এই পৃথিবীতে পক্ষীরাজ ঘোড়া ছিল। এই ঘোড়াই ডিম পাড়তো। ঘোড়ার লাথির কথা প্রায়ই আমরা শুনি। এ লাথির জোর এতই যে, এ লাথিতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। ঘোড়ার লাথি খেয়েছি আমিও। প্রাণে বেঁেচ গেলেও লাথির চিহ্ন পিঠে রয়ে গেছে। ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমায়। আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে পারি। এটা হয় যখন আমি বাসে সিট না পেয়ে রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। মনে পড়ে বিয়ের সময় অনেকক্ষণ ধরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার ঘুম এসেছিল। শুভ দৃষ্টির সময় ঘুম জড়ানো চোখে নতুন বউ–এর চেহারা দেখতে পারিনি। আমার খুব ইচ্ছে করে ঘোড়ার দুধ খেতে। মোষের দই–এর খ্যাতি রয়েছে। আমার ধারণা ঘোড়ার দুধের ঘোল তৈরি করতে পারলে এটা হবে একটা অতি পুষ্টিকর পানীয়। আমার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে ঘোড়ার খামার খুলবার। আমি তখন অবশ্যই ঘোড়ার দুধের ঘোল তৈরি করবো। এই মুহূর্তে ঘোড়ার খামার করা আমার পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না, তবে আপাতত আমি একটা ঘোড়া কিনবো। জানি মানুষ আমাকে দেখে বলবে ‘একেই বলে গরীবের ঘোড়া রোগ’।
এটা একটা সংক্রামক ব্যাধি। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। হতে পারেন আপনিও।