ঘুম ঘুম চোখে

ভাষান্তর: সাদিয়া মেহজাবিন | শনিবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

কত কথা না বললেও হয়, সয়েরয়ে খুব মন্দ যাচ্ছে এমনটা তো নয়। তবুও কথা বলতে না পারার যে গুমোট কষ্ট তা বোধহয় মানুষের আদি রোগ। লেখাতেও তাই। ‘কেন নারীরা পুরুষের সমপরিমাণ ঘুমাতে পারেন না?’ এমন শিরোনামে যেকোনো লেখা আপনাদের কতটা ভাবায় জানি না, তবে এর পেছনে শত কারণ আঁচ করতে পারি। ঘুম ঘুম চোখে, পাতারা নুয়ে পড়লেও শরীরকে ইচ্ছে হলেই এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ বঙ্গ নারীদের হয় না। ফলত আপাতদৃষ্টিতে ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এ প্রকাশিত ‘নাহিদা নিশি’র ‘ডযু পধহ্থঃ ড়িসবহ ংষববঢ় ধং সঁপয ধং সবহ?’ লেখাটির বাংলা ভাবানুবাদ করে পাঠককে কিছুটা জানান দিতে চাই, কেন নারীরা ঘুমাতে পারছেন না?

ঘুম আমাদের সকল রোগের মহাওষুধ, শারীরিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চালানো থেকে স্মৃতির বিকাশে ঘুম অপরিহার্য। বেশিরভাগ চিকিৎসকের মতে, ঘুম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সমাধানে, মারাত্মকভাবে কার্যকরী। এটি সত্য, নারীরা জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হওয়া সত্ত্বেও সারাজীবনই তারা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ভোগেন।

পর্যাপ্ত ঘুমের প্রসঙ্গ এলেই, উদ্বেগজনকভাবে লিঙ্গ বৈষম্যও মাথা চাড়া দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, সকল প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানো উচিত। কিন্তু এরমাঝে খুব অল্প সংখ্যক নারীই তা করতে পারেন। নিউরোসায়েন্স বলছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের একটু বেশি ঘুমানো উচিত। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন অনুসারে, প্রায় ৪০ শতাংশ নারী অনিদ্রায় ভোগেন। এল.কে’র এক সমীক্ষায় দেখা যায়, নারীরা প্রতি রাতে পুরুষদের তুলনায় গড়ে তিন ঘণ্টা কম ঘুমান, যা প্রতি বছর হারানো ঘুমের ১০৯৫ ঘণ্টার সমান। এতে আরো দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি ব্রিটিশ নারী ক্রমাগত ঘুম বঞ্চিত বোধ করেন।

যদিও নারীদের ঘুমের বঞ্চনার বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক কারণ রয়েছে। তবে বয়ঃসন্ধিকাল অব্দি ছেলে এবং মেয়েদের আদর্শ ঘুমের ধরনগুলোর খুব একটা পার্থক্য নেই। বরং বয়ঃসন্ধির পরে নারীরা পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে। বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন সময়তে, এর জন্যে স্বল্প পরিচিত একটি শব্দের প্রচলনও রয়েছে; পিরিয়ডসোমনিয়া। যা মূলত হরমোনের ওঠানামা, মেজাজের পরিবর্তন, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, পেটে ব্যথাসহ নানাবিধ কারণে হয়ে থাকে।

বিশাল শতাংশের নারী ঋতুস্রাবের সময় ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। এমনকি বর্তমানে, শিশুর প্রতিপালনও মায়ের অপর্যাপ্ত ঘুমের একটি বিরাট কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মায়েরা তাদের নিজস্ব আরাম ছেড়ে দিলেও, কিছু বাবারা তো আলাদা কক্ষেই ঘুমান, যাতে করে শিশুর কান্না শুনতে না হয়।

সমস্ত শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা ছাড়াও, ঐতিহ্যগতভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে অসমভাবে কেবল নারীদেরকেই গৃহস্থালির কাজে পরিচালনাও, বিশ্বব্যাপী নারীদের নিদ্রাহীনতাকে ব্যাখ্যা করে। বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষরা তাদের নির্দিষ্ট কিছু সময়ই গৃহস্থালির কাজে ব্যয় করেন। সম্ভবত এই কারণেই জাতিসংঘ দাবি করছে, এভাবে যদি চলতে থাকে, নারীদের উন্নয়ন হতে অন্তত আরো ৩০০ বছর সময় লাগবে।

আমার মাকে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা তৈরির কাজটি করতে হয়, বিপরীতে আমার বাবা সাধারণত ঘুম থেকে দেরিতে ওঠেন, ততক্ষণে ফ্রেশ হতে চলে যান। আমার মায়ের নাস্তা বানানো ছাড়াও থালাবাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করতে হয়। মায়েরা কি মাঝে মাঝে ঘুম থেকে দেরিতে উঠতে চান না? কাজ রেখে তারাও কি দ্রুত ঘুমাতে চাইতে পারেন না? তারাও তো মানুষ, আমরা যেভাবে তাদের মেশিনের মতো ব্যবহার করি, তারা তো তা নন’।

সব বাদ দিয়ে যদি বলি, তবে কর্মজীবী নারীদের অবস্থাটা কি? তাদের কি যথেষ্ট ভালো ঘুম হয়? অবশ্যই ‘না’। অনেক গবেষণাই বলছে, কর্মজীবী নারীদের ঘুমের ধরনও পুরুষদের তুলনায় করুণ হয়। দ্বিমুখীভাবে, তাদের ঘরের কাজ এবং বাইরের সকল কাজ একত্রে সম্পাদনের সম্মুখীন হতে হয়। সেহেতু তারা তাদের কর্মজীবী পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় বেশি শক্তি ব্যয় করছেন। অর্থাৎ তাদের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সেই সহকর্মীদের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু এই প্রয়োজনীয়তাগুলি প্রায়শ অপূর্ণ রয়ে যায়।

অনেকে হয়তো বলবেন, ভালো ঘুমের এই চাহিদা এখন বিলাসিতা কেবল। যেখানে আফগানিস্তানের মতো দেশে নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তবুও মনে রাখুন, প্রত্যেকের প্রশান্তির নিদ্রা নিশ্চিত করা, জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপকে ভালো করার পূর্বশর্ত। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিতভাব, নারীদের অনেক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে এবং এর ফলে তারা যে শুধু বেঁচে থাকবে তা হয়, দারুণভাবে এগিয়েও যাবে।

কৃতজ্ঞতা: নাহিদা নিশি

দ্য ডেইলি স্টার’ এ প্রকাশিত ইংরেজি আর্টিকেল থেকে

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপুল নারী উদ্যোক্তা, লাভ-ক্ষতির নিক্তিতে
পরবর্তী নিবন্ধস্পিডবোটসহ সকল নৌযানের ভাড়া কমানোর দাবি