শঙ্খচরে এক সময় মুলা মৌসুমি সবজি হিসেবে শীতকালে চাষাবাদ করা হত। এখন বদলে গেছে দিন, শঙ্খনদের চরে বছরজুড়ে চাষ হচ্ছে মুলা। শঙ্খচরের শত শত কৃষক এখন মুলা চাষে ঝুঁকছেন।
জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মুলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কৃষকরাও দাম পাচ্ছেন ভালো। পাইকারী বাজারে প্রতি বার (৮০/৯০) কেজি মুলা প্রকারভেদে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দিনে–রাতে শঙ্খচর থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা মুলা নিয়ে যাচ্ছেন নগরীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকার উন্নত জাতের বীজ আমদানি ও বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা প্রদান করায় কৃষকরা মুলা আবাদে সফলতা পাচ্ছেন। বিগত ৩/৪ বছর আগে শঙ্খচরের কয়েকজন কৃষক শীত মৌসুমের পরও মুলা চাষ অব্যাহত রাখেন এবং লাভবান হন। ফলে এখন সারাবছর মুলার চাষ করছেন এই চরের সকল কৃষক। শঙ্খচর ছাড়াও শঙ্খনদের তীরবর্তী চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি, দোহাজারী পৌরসভা, বরমা, বৈলতলী, সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এই সময় স্বল্প পরিসরে মুলার চাষাবাদ শুরু করেছেন।
গত শনিবার বিকেলে দোহাজারী পৌরসভাস্থ শঙ্খনদের বিশাল চরে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহের মধ্যেও কৃষকরা মুলা ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন, আবার কেউ কেউ নতুনভাবে মুলা ক্ষেতের বীজতলা তৈরি করছেন। কৃষক মোহাম্মদ হাসান জানান, শঙ্খচরের মাটি যে কোনো ধরনের সবজি চাষের জন্য আদর্শ। এখানে উৎপাদিত সবজি স্বাদে অতুলনীয়, পুষ্টিগুণে ভরা। চাহিদার কারণে এই অসময়েও তারা মুলা চাষে অধিক মনোনিবেশ করেছেন। আগামী বর্ষায় শঙ্খনদে পানি না আসা পর্যন্ত পালাক্রমে মুলা চাষ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শঙ্খচরের কৃষক মো. মারুফ জানান, তিনি গত ৩ বছর থেকে শীতকাল ছাড়াও এই শুষ্ক মৌসুমেও মুলার চাষাবাদ শুরু করেন। এই সময়ের মুলার স্বাদ শীতকালীন মুলার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তিনি বলেন, এই সময় প্রচন্ড গরমে মুলা চাষাবাদে অধিক পরিশ্রম করতে হয়। নিয়মিত সেচ দেয়া, পরিমাণ মতো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ৪০ শতক জমিতে মুলার চাষাবাদ করতে জমি তৈরি, শ্রমিকের মজুরি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং ক্ষেত পরিচর্যায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক কানি জমিতে মুলা উদপাদন হয় প্রায় ৬০ বার (প্রতিবারে গড়ে ৮০ কেজি)। সে হিসেবে এক কানি জমি থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মুলা বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে বর্তমানে প্রতি কানি জমিতে মুলা থেকে আয় হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। একই জমিতে এভাবে পালাক্রমে কয়েকবার মুলার চাষ করেন কৃষকরা।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন জানান, মুলা মূলত শীতকালীন সবজি। কৃষকরা শীতকালেই মুলা বেশি চাষাবাদ করেন। কিন্তু এই সময়ে দোহাজারী অংশের শঙ্খেরচরে কৃষকরা অধিক পরিমাণে মুলার চাষাবাদ শুরু করছেন। শুধু দোহাজারী এলাকাতেই ১৫ হেক্টরের অধিক জমিতে বর্তমানে মুলার চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ, অসময়ে এসেও কৃষকরা মুলা চাষে ভালো লাভবান হচ্ছেন। বিষয়টা অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অনুকরণীয়। পাশাপাশি উপজেলার অন্যান্য স্থানেও কিছু কিছু মুলার চাষাবাদ করা হয়েছে বলে আমরা রির্পোট পেয়েছি। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উচ্চ ফলনশীল বীজ আমদানী করায় এবং কৃষকদের প্রণোদনাসহ সহায়ক সুযোগ সুবিধা প্রদান করায় কৃষিক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।