গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও গতিশীল ও সম্প্রসারণ করতে হবে

| সোমবার , ১৭ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

অর্থনীতিবিদদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতি বিশেষ করে কৃষি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। গতানুগতিক ধারার বাইরে আজ কৃষি নির্ভর আরও বহু উপখাতের বিকাশ ঘটেছে। এগুলো অনেকটা শিল্পখাতে রূপ নিয়েছে। যেমন হাঁসমুরগীর খামার বা পোল্ট্রি শিল্প, ডেইরী শিল্প, মৎস্য চাষ ইত্যাদি। অনেক বেকার তরুণ এসব খাতে সম্পৃক্ত হয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখছে। গত ১২ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদকে সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। নানা কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে চাপে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রবাসীদের প্রচুর রেমিটেন্স স্বজনদের হাতে পৌঁছে গেছে। পাইপলাইনেও প্রচুর রেমিটেন্স রয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের খরচের জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ বাজারে ঘুরতে শুরু করেছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। রমজানের প্রথম দশ দিন শেষ হয়েছে। রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হচ্ছে রেমিটেন্স। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ ৫৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বৈধভাবে বসবাস করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের নাগরিকের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সামপ্রতিক তথ্যে জানা গেছে। দেশের প্রবাসী পরিবারের অন্তত ৩৫ শতাংশের বসবাস চট্টগ্রাম বিভাগে। যাদের কাছে প্রবাসীরা নিয়মিত টাকা পাঠান। ঈদকে সামনে রেখে টাকা পাঠানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যাংকগুলোর শাখা ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, প্রবাসীরা প্রচুর টাকা পাঠাচ্ছেন। এখন পরিবার পরিজন তা তুলে কেনাকাটা করছেন। যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। গত বছর ঈদরোজায় দেশে ২৬ হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছিল। এবার এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন রেমিটেন্স গ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।

রমজানে মানুষ প্রচুর দান খয়রাত করে থাকেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতেও ইতোমধ্যে বেশ টাকা পয়সা গেছে। এসব অর্থও ব্যয় হচ্ছে কেনাকাটায়। যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একাধিক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, দেশের পুরো অর্থনীতি আবর্তিত হচ্ছে ঈদবাজারকে ঘিরে। গ্রাম কিংবা শহর সর্বত্রই কেনাকাটার ধুম পড়েছে। বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে অর্থনীতি। যা দেশের ব্যবসাবাণিজ্য ও উৎপাদনের জোয়ার সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই এর অবস্থান। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের বার্ষিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ এতো বেশি যে যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চাবিকাঠি। গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নকে সক্ষম করার পাশাপাশি, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স ক্ষুদ্র শিল্প এবং অন্যান্য আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম তৈরিতে সহায়তা করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের রেমিট্যান্স আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন সময় এসেছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও গতিশীল ও সম্প্রসারণ করে সেখানে কর্মসংস্থান বা আয় সংস্থান আরও বাড়ানো। গ্রামীণ অর্থনীতি বলতে শুধু শস্য উৎপাদন নয়। কৃষি খাতের অন্য উপশাখা যেমন মৎস্য, পশুপালন, পোলট্রি শিল্পেও মনোযোগ দিতে হবে। জিডিপিতে এর অবদান ১৮১৯ শতাংশ। কৃষিপণ্য আমদানিনিভর্রতা কমাতে হবে। আবাদি জমি বাড়িয়ে কৃষিতে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত জনশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শুধু কৃষি উৎপাদন নয়, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে জোর দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে গ্রামে শাখা খুলে অর্থায়নে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষি আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দরিদ্রতা হ্রাস পাবে। শুধু সস্তা পণ্য রপ্তানি ও সস্তা শ্রম তথা পরনির্ভরশীলতার ওপর ভর করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। তাই অর্থনীতির এই নড়বড়ে অবস্থা থেকে মুক্ত করতে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ ও দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা ও বৈষম্য দূর করে একটি টেকসই অর্থনীতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে