গ্রহ-পানির যোগসূত্র, সমাধান করতে পারে পৃথিবী গঠনের রহস্য

| রবিবার , ৩ মার্চ, ২০২৪ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সমপ্রতি এমন একটি ডিস্ক বা বলয়ের মধ্যে পানির সন্ধান পেয়েছেন, যা সম্ভবত বিভিন্ন গ্রহের গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীদের ধারণা বলছে, বিভিন্ন নতুন গ্রহ কীভাবে তৈরি হয়, তার রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে নতুন এ গবেষণা। তবে এ ধরণের গ্রহগঠনকারী ডিস্ক কীভাবে পানি বণ্টন করে, তার মানচিত্র বানাতে সক্ষম হননি গবেষকরা। খবর বিডিনিউজের।

এর মধ্যে একজন গবেষক বলেছেন, এ ধরনের ডেটা যে কখনও সংগ্রহ করা যাবে, তা তারা কখনও কল্পনাও করেননি। গবেষণায় এমন এক ডিস্কে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যার মাধ্যমে নতুন কোনও গ্রহ জন্ম নেওয়ার সময় পানির সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন বিজ্ঞানীরা। পর্যবেক্ষণে আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/ সাবমিলিমিটার অ্যারে’ নামের এক বিশেষ ধরনের টেলিস্কোপ (আলমা) ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে পৃথিবী থেকে সাড়ে চারশ আলোকবর্ষে দূরের নক্ষত্রপূঞ্জ টরাসএ অবস্থিত এইচএল টাউরি নামের এক তরুণ সূর্যের মতো দেখতে নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ ডিস্কে পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে।

এ ডিস্কে পানির আয়তন পৃথিবীর সকল মহাসাগরের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি। আমি কখনই কল্পনা করিনি, আমরা এমন অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের মহাসাগরের একটি ছবি ধারণ করতে পারব যেখানে গ্রহ তৈরির সম্ভাবনা আছে, বলেন গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ মিলান এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ স্টেফানো ফ্যাচিনি।

তিনি বলেন, আমাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, কীভাবে পানির উপস্থিতি কোনও গ্রহ ব্যবস্থার বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে, ঠিক যেমনটি আমাদের নিজস্ব সৌরজগতে প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে ঘটেছিল। এটা সত্যিই অসাধারণ। আর আমরা কেবল এটি শনাক্তই করিনি, বরং এর বিভিন্ন ছবিও ধারণ করার পাশাপাশি পৃথিবী থেকে সাড়ে চারশ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত জলীয় বাষ্পের রহস্যও স্থানিকভাবে সমাধান করতে পারি, বলেছেন এ গবেষণার সহলেখক ও ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ বোলোগনার জ্যোতির্বিজ্ঞানী লিওনার্দো টেস্টি।

গবেষণায় টেলিস্কোপ আলমা’র সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি (ইএসও)। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, এইচএল টাউরিতে থাকা ডিস্কের যে অঞ্চলে একটি ফাটল রয়েছে, সেখানে বিশাল পরিমাণ পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, ওই অঞ্চলে গঠিত গ্রহগুলোর রাসায়নিক গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে এ জলীয় বাষ্প। এর মধ্যে একটি ছবিতে বরফের ধূলিকণা থেকে পানির অণু বের হওয়ার ঘটনা সরাসরি দেখতে পারা সত্যিই রোমাঞ্চকর, বলেছেন গবেষণায় অংশ নেওয়া ইএসও’র জ্যোতির্বিজ্ঞানী এলিজাবেথ হামফ্রেইস।

মহাকাশের বিভিন্ন ডিস্কে থাকা ধূলিকণা একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সাধারণত একটি বড় আকারের গ্রহ গঠিত হয়ে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, যেসব অঞ্চলে ধূলিকণার তাপমাত্রা পানি জমাট বাঁধার মতো যথেষ্ট ঠাণ্ডা, সেখানে বিভিন্ন বস্তুর লেগে থাকার প্রবণতা বেশি। আর কোনও গ্রহ গঠনের আদর্শ জায়গাও তৈরি হয়ে থাকে এর মাধ্যমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আহতদের একটি বড় অংশ গুলিবিদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধপালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না চালকের