চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট সহজে ঘুচছে না। ইতোপূর্বে এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংকটের সুরাহা হওয়ার কথা বলা হলেও তা সম্ভব হয়নি। মহেশখালীতে জাহাজ মেরামত সম্পন্ন না হওয়ায় সেটিকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হচ্ছে। আগামী দেড় মাস পর এই জাহাজ ঠিকঠাকভাবে ফিরে আসলেই চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান বাড়বে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট বহু পুরনো। গত সপ্তাহ থেকে এ পরিস্থিতির আবার অবনতি ঘটে। রান্নাঘরের চুলা থেকে কল–কারখানা কিংবা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ সর্বত্রই ‘নেই নেই’ রব ওঠে। মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালে সংস্কার কাজ চালানোর ফলে চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান এক তৃতীয়াংশের বেশি কমে গেছে। গত সপ্তাহে বলা হয়েছিল, এলএনজি সরবরাহে নিয়োজিত জাহাজ এফএসআরইউ’তে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করে অপারেশনে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। জাহাজটিকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে ঠিক করে আনতে হবে। এজন্য দেড় মাসের মতো সময় লাগবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। এতে করে আগামী দেড় মাস চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টর বর্তমানে পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। চট্টগ্রামে আগে আশুগঞ্জ–বাখরাবাদ গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে সিলেট এবং কুমিল্লা অঞ্চল থেকে যে গ্যাস আসতো তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র এলএনজি দিয়েই চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা থেকে রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত সবকিছু সামাল দেয়া হয়। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি পর্যাপ্ত থাকলেই কেবল চট্টগ্রামে গ্যাসের স্বাভাবিক যোগান থাকে। এলএনজি আমদানি কমে যাওয়া কিংবা কোনোভাবে বিঘ্নিত হলেই চট্টগ্রামে গ্যাস থাকার সুযোগ নেই।
মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালে সরকারের দুইটি এবং বেসরকারি খাতের একটি বিশেষায়িত জাহাজ এফএসআরইউ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ দেয়া হয়। এসব জাহাজে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাসে পরিণত করে পাইপ লাইনে দেয়া হয়। যা সরাসরি চট্টগ্রামে পৌঁছায়। এই পাইপ লাইন ব্যবহার করে গত বেশ কিছুদিন ধরে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। এরমধ্যে চট্টগ্রামের জন্য ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রেখে বাকি গ্যাস নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা অঞ্চলে। কিন্তু মহেশখালীতে থাকা সরকারি দুইটি এলএনজিবাহী জাহাজের (এফএসআরইউ) একটিতে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু করায় এলএনজি সরবরাহ নেমে আসে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামের বরাদ্দ। ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে দেয়া হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। বাকি গ্যাস নেয়া হচ্ছে ঢাকা অঞ্চলে।
গ্যাসের প্রবাহ কমে যাওয়ার চট্টগ্রামে গ্যাসের চাপ মারাত্মকভাবে কমে যায়। রান্নাঘরের চুলা থেকে শিল্প কারখানা সর্বত্রই দেখা দেয় গ্যাসের অভাব। রান্না ঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় গাড়ির। শহর এবং গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব সিএনজি স্টেশনেই গ্যাস বিক্রি অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল দিনভর শহরের বিভিন্ন সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে গ্যাসের জন্য অপেক্ষমান গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে সিএনজি টেঙিসহ গণপরিবহনে। ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য।
চট্টগ্রামে যে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে কাফকোতে ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট, সিইউএফএলে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট, শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়েছে। বাকি গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকার শত শত শিল্প ও বাণিজ্যিক, ৬০টিরও বেশি সিএনজি স্টেশন এবং ৬ লক্ষাধিক আবাসিক গ্রাহককে ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে হয়েছে। গতকাল দিনভর নগরজুড়ে গ্যাসের হাহাকার চলেছে। রান্না ঘরে চুলা জ্বলেনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) চট্টগ্রামের গ্যাসের রেশনিং করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেও সম্ভব হচ্ছে না। কাফকো কিংবা সিইউএফএল এই দুইটি সার কারখানার একটি বন্ধ না করলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। তিনি জাহাজ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের যোগান বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই বলেও স্বীকার করেন।