নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহসে ভর করে ১৬ বছর আগে গোলাপসহ নানা ফুলের চাষ করবেন বলে ঠিক করেন কফিল উদ্দিন (৩৫)। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে অন্যের কাছ থেকে দেড় কানি জমি বর্গা নিয়ে ফুলের চাষ শুরু করেন। জমি বর্গা নেওয়া বাদে আরও দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন ফুল চাষে। ওই জমিতে প্রথমবারের মতো ৭ হাজার ৫০০টি চারা রোপণ করেন। সেই শুরু। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
ফুল চাষি কফিল উদ্দিন জানান, ১৬ বছর আগে গোলাপ ফুলের তেমন কদর ছিল না। তখন প্রতিটি গোলাপ ফুল পাইকারদের কাছে বিক্রি করে পেতেন মাত্র তিন টাকা। তবে সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। বর্তমানে লাল প্রজাতির একটি গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকা। আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবসহ বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে গোলাপ ফুলের কদরও বেড়েছে। একইসাথে দামও উঠতির দিকে থাকে। দিবসকেন্দ্রিক প্রতিটি লাল গোলাপ পাইকারদের কাছে বিক্রি করে ১৩–১৪ টাকা পান। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেড় কানি গোলাপ বাগান থেকে বিক্রি করেছেন লাখ টাকার ফুল। আরও কয়েকজন পাইকারি ক্রেতা আগাম চাহিদা দিয়ে রেখেছেন ২০ হাজার ফুলের। সেই চাহিদা পূরণের জন্য নিজেও বাগানে শ্রম দিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের আলমনগর এলাকায় কফিল উদ্দিনের বাগানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমানে বরইতলী ইউনিয়নের শতাধিক চাষি অন্তত ২০০ একর জমিতে গোলাপ ও প্রায় ১৫০ একর জমিতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ নানা ফুলের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন বাগানে শ্রম দিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক নারী–পুরুষ।
কফিল উদ্দিন বলেন, দেড় কানি জমি বর্গা নেওয়া, চারা রোপণ, সারসহ বিভিন্ন ওষুধ ছিটানো ও শ্রমিক নিয়োগে খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা। মৌসুম শেষে গোলাপ ফুল বিক্রি করে আমার আয় হয় প্রায় ৭ লাখ। খরচ বাদ দিলে নিট লাভ হয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এভাবে ১৬ বছর ধরে সংসারের হাল ধরার পাশাপাশি ফুলের চাষ করে একটি পাকা ঘরও তৈরি করেছেন।
গোলাপ ফুলের ফলন কেমন হচ্ছে? জানতে চাইলে আরেক চাষি নাছির উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গোলাপের বাগান বেশ নজরকাড়া। আমি গোলাপসহ রকমারি ফুলের চাষ যেমন করি, তেমনি গোলাপের চারাও বিক্রি করি। আজ (গতকাল) রামুর এক চাষি ২৪ হাজার টাকার এক হাজার কলপ–চারা নিয়ে গেছেন। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে।
কোন প্রজাতির গোলাপের চাহিদা বেশি? সেই প্রশ্নে চাষিরা জানান, বেশি চাহিদা রয়েছে লাল গোলাপের। তবে দ্বিগুণ দাম পেলেও সাদা ও হলুদ প্রজাতির গোলাপের চাষ এখানে কম হয়। সাদা ও হলুদ প্রজাতির গোলাপের বাড়তি আকর্ষণ থাকায় যা ফলন হয় তা মুহূর্তের মধ্যেই কিনে নিয়ে যান চট্টগ্রাম, কঙবাজার, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা।
কয়েকজন ফুল চাষি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার কৃষিক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়াসহ নানাভাবে কৃষকদের সহায়তা দেয়। কিন্তু কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ফুল চাষিদের জন্য তেমন কোনো প্রণোদনা বা সুযোগ–সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় না।
বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, দিবস উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় বরইতলীর শতাধিক চাষির প্রত্যেকে ফুল বিক্রি করে পর্যাপ্ত লাভের মুখ দেখছেন। সামনের দিবস উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার ফুল বিকিকিনি চলবে বরইতলীতে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন আজাদীকে বলেন, দাপ্তরিক হিসেবে প্রায় ২০০ একর জমিতে গোলাপ এবং প্রায় দেড়শ একরে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ হয়েছে। ফুল চাষিদের প্রণোদনা বা অন্য কোনোভাবে সরকারি সহায়তা দেওয়ার বিধান না থাকলেও কৃষি দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।