গৃহকর কমানোর নামে অর্থ আদায়ে এক ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারী

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা মেয়রের দুজন চাকরিচ্যুত, শোকজ করা হচ্ছে ১০ জনকে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব শাখার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত পৌরকর (গৃহকর ও রেইট) আপিলে কমানোর নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি বিনামূল্যের আপিল ফরমও বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও তা বার বার অস্বীকার করে আসছিল সংশ্লিষ্টরা। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এক ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে যারা করদাতাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই ১২ কর্মকর্তার নামের তালিকা ইতোমধ্যে চসিকে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ডে কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অভিযুক্তদের মধ্যে অস্থায়ীভাবে কর্মরত দুইজনকে চাকরিচ্যুত এবং ১০ জনকে শোকজ করার জন্য গতকাল সোমবার চূড়ান্ত অনুমোদনও দিয়েছেন মেয়র। বিষয়টি নিশ্চিত করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। যাদের শোকজ করা হবে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তাদেরও চাকুরিচ্যুত করা হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম আমরা প্রশ্রয় দিব না। যারা যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি হোল্ডিং ট্যাঙের আপিল নিয়ে কারো সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন না করার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
অনিয়মে যারা জড়িত : আর্থিক লেনদেনে জড়িত ১২ জনের মধ্যে রাজস্ব সার্কেল-০৭ এর কর আদায়কারী কাজী মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানও মোছলেহ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন মেয়র।
এছাড়া যে ১০ জনকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হচ্ছেন- রাজস্ব সার্কেল-০৩ এর কর কর্মকর্তা (কর) মো. সেলিম উদ্দিন শিকদার, রাজস্ব সার্কেল-০৬ এর উপ-কর কর্মকর্তা (কর) আবুল কালাম, রাজস্ব সার্কেল-০৭ উপ-কর কর্মকর্তা (কর) মো. কামরুল হাসান, রাজস্ব সার্কেল-০৭ এর কর আদায়কারী রাজীব চৌধুরী, রাজস্ব সার্কেল-০১ এর কর আদায়কারী মো. সালাউদ্দিন, রাজস্ব সার্কেল-০২ কর আদায়কারী এম. তৈয়বুর রহমান, রাজস্ব সার্কেল-০৪ এর কর আদায়কারী মো. আনিছ উদ্দিন, রাজস্ব সার্কেল-০৫এর কর আদায়কারী ত্রিদীপ দাশ, রাজস্ব সার্কেল-০৬ এর কর আদায়কারী আবদুল মোমেন পাটোয়ারি এবং রাজস্ব সার্কেল-০৭ কর আদায়কারী মিশকাতুল ইসলাম।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে নাম থাকা ১২ জনের বাইরেও একাধিকজনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের নাম জানিয়েছেন করদাতারা। এরা হচ্ছেন সুজন, তপন দাশগুপ্ত ও মহসীন। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের প্রতীকী গণশুনানিতে অংশ নিয়ে করদাতারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হোসাইন বলেন, ৭ নম্বর সার্কেলের সুজন আপিল না করে কন্ট্রাক্ট (চুক্তি) করলে প্রস্তাবিত তিন লাখ ১৪ হাজার টাকা গৃহকর এক লাখ টাকার মধ্যে করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তবে সেজন্য ৮০ হাজার টাকা দাবি করে সুজন। দেওয়ানপুকুর এলাকার রাজীব আচার্যের অভিযোগ তপন দাশগুপ্ত নামে চসিকের একজন তার কাছে ঘুষ চেয়েছেন। মোগলটুলীর বাসিন্দা আবু তাহের জাবেদ বলেন, মহসীন নাম রাজস্ব শাখার এক কর্মচারী ৭৮ হাজার টাকার ট্যাঙ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য ১৩ থেকে ১৭ হাজার টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেয়।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করায় ২০১৭ সালের পঞ্চবার্ষিকী কর পুর্নমূল্যায়নের (রি-এসেসমেন্ট) আলোকে গৃহকর আদায়ে গত জুলাই মাস থেকে কার্যক্রম শুরু করে চসিক। এ লক্ষ্যে ১ জুলাই থেকে চসিকের ৮টি রাজস্ব সার্কেল থেকে হোল্ডিং মালিকদের ধার্য করা গৃহ করের নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। অবশ্য ভবন মালিকদের কারো আপত্তি থাকলে আইন অনুযায়ী আপিল করার সুযোগ আছে। আপিল করলে কর সহনীয় করার আশ্বাস দিয়েছেন সিটি মেয়র।
এদিকে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ প্রস্তাবিত গৃহকরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারা আপিল না করার জন্য জনমত তৈরি করছে। তাদের দাবি, আপিলের নামে দুর্নীতি হচ্ছে। গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, প্রস্তাবিত পৌরকর আপিলে কমিয়ে দেয়ার নাম করে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। টাকার অংকে তা ইতোমধ্যে ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নগরে দুই লাখের বেশি হোল্ডিং আছে। সিটি কর্পোরেশনের বক্তব্য অনুযায়ী ৩০ শতাংশ আপিল করেছে। ওই হিসেবে ৬০ হাজার হোল্ডিংয়ের বিপরীতে আপিল হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্পোরেশনের যারা এসেসর এবং কর আদায়কারী আছেন তারা আপিলে কমিয়ে দেয়ার নাম করে হোল্ডিং মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই-আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেউ নেই, জাহাজটি কীভাবে এলো সেন্টমার্টিনে
পরবর্তী নিবন্ধআঘাত হেনেছে সিত্রাং