গৃহকর্তাকে জিম্মি করে ডাকাতির চেষ্টা

পাঁচলাইশে ঘটনা, আশেপাশের লোকজন ভবনটি ঘেরাও করে পুলিশে খবর দেয় চাকরিরচ্যুতির পর ডাকাতির পরিকল্পনা এক গৃহকর্মীসহ দুজন গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নিজ বাসায় গৃহকর্তাকে জিম্মি করে ডাকাতির চেষ্টাকালে এক গৃহকর্মীসহ দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। উদ্ধার করা হয় গৃহকর্তা লোকমান হাকিম ও তার স্ত্রীকে। লোকমান হাকিম সামান্য আহত হয়েছেন। তাকে বাথরুমে আটকে রেখেছিল ডাকাতরা। উদ্ধারের সময় তার স্ত্রীর হাতপা বাঁধা ছিল। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতি করতে আসা লোকমানের বাসা থেকে এক বছর আগে চাকরিচ্যুত দুই কর্মী।

গতকাল মঙ্গলবার নগরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের আলহিদায়াহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সংলগ্ন ভবনে এ ঘটনা ঘটে। ভবনটির মালিক কাজী লোকমান হাকিম। তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শিল্পগ্রুপ আবুল খায়েরের জামাতা। তিনি থাকেন ভবনের দ্বিতীয় তলায়।

ধৃত দুই ডাকাত হচ্ছে আকাশ (২৫) ও বায়েজিদ শেখ (১৯)। এর মধ্যে আকাশ হচ্ছে লোকমান হাকিমের গৃহকর্মী। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সাব্বির (১৯) ও রিয়াদ (২০) নামে দুই ডাকাত। সাব্বির মালি এবং রিয়াদ গৃহকর্মী হিসেবে এক বছর আগে লোকমানের বাসায় কাজ করত। তখন তাদের ছাঁটাই করা হয়। এর জের ধরে বর্তমান গৃহকর্মী আকাশের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে লোকমান হাকিমের বাসায় প্রবেশ করে তিন ডাকাত বায়েজিদ, রিয়াদ ও সাব্বির। বাসায় আগে থেকেই ছিল গৃহকর্মী আকাশ। ডাকাতির চেষ্টার বিষয়টি টের পেয়ে আশেপাশের লোকজন ভবনটি ঘেরাও করে পুলিশকে খবর দেয়। এ সময় দুই ডাকাত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বায়েজিদকে ধরে ফেলে জনতা।

এদিকে খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা ভবনটি ঘিরে ফেলেন। পরে ভবনটিতে ডাকাতদের ধরতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এতে অংশ নেন পুলিশের সোয়াত টিমের সদস্যরাও। অভিযানে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। অভিযান চালাকালে শত শত উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করেন। তাদের কেউ কেউ দাবি করেন, আওয়ামী লীগের দুই নেতা বাসাটিতে আত্মগোপন করে আছেন খবর পেয়ে তারা এসেছেন।

এদিকে দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। এর ১৫ মিনিট আগে ভবন মালিক লোকমান হাকিমকে বের করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢুকিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আড়াইটার দিকে ভবন থেকে বের হয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িটিতে ডাকাত প্রবেশ করে ঘরের লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছিল। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ আসার আগেই পালিয়ে যাওয়ার সময় বায়েজিদ নামে একজনকে আটক করেছে স্থানীয়রা। বাড়ির মালিককে একজন ডাকাত সদস্য জিম্মি করে বাথরুমে আটকে রেখেছিল। পাঁচ মিনিটের অপারেশনে আমরা তাকে উদ্ধার করি। তিনি কিছুটা আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ডাকাতি করতে যাওয়া লোকজন ওই ভবনে কাজ করত। যা বুঝতে পারছি, ডাকাতির উদ্দেশ্যেই তারা বাসায় প্রবেশ করেছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। দেখি আরও কিছু পাওয়া যায় কিনা।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা শোনার পর পরই আমি ঘটনাস্থলে আসি। প্রথমে ঘরের দরজা ভেঙে একটি শোবার রুমে ঢুকি। সেখানে রক্ত দেখতে পাই। ততক্ষণে আকাশ তার মালিক লোকমানকে একটি বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সোয়াত টিমের সদস্যদের পাঠাতে বলি। পরে সবার চেষ্টায় ভিকটিমকে উদ্ধার করি। পাশের রুমে থেকে তার স্ত্রীকে হাতপা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করি।

তিনি বলেন, বায়েজিদ, রিয়াদ, সাব্বির নামে তিনজন ডাকাতি করতে ওই বাসায় ঢুকেছিল। আকাশ আগে থেকেই ঘরে ছিল। আকাশ তার খুব কাছের মানুষ বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার বাসার সব কাজ সে করে দিত। রিয়াদ ও সাব্বিরও তার বাসায় কাজ করত। তবে তাদের এক বছর আগে ছাঁটাই করেন লোকমান। এর জের ধরেই এ ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। ডাকাতদের উদ্দেশ্যে ছিল ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমরা ভবনের ম্যানেজার বাবলু ও লোকমানের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো কিছুই তারা নিয়ে যেতে পারিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাতৃভাষা বাংলার দাবিতে প্রতিদিন রাজপথে চলে মিছিল
পরবর্তী নিবন্ধমেয়রের উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার