ডাকাতি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা রোধে র্যাব–৭ চট্টগ্রামের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলিং ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাব–৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম। চট্টগ্রাম নগরীতে অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে র্যাব–৭ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছে। এক্ষেত্রে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ করেছেন।
তিনি জানান, গত এক মাস ধরে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনায় র্যাব–৭ চট্টগ্রামের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত কিশোর গ্যাং, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় হত্যা, মাদক, ডাকাতি, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রেখেছে।
কিশোর গ্যাং : সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড আলোচিত বিষয় এবং ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। অল্প বয়সী কিশোররা এসব গ্যাং বা গ্রুপের সদস্য। তারা পাড়া–মহল্লায় বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের সংঘবদ্ধ করে। নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে এসব গ্রুপের সদস্যরা মারামারি দিয়ে শুরু করে। পরে সন্ত্রাস, মাদক, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। তাই র্যাব–৭ চট্টগ্রামের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে ৫০টির অধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। গত ছয় মাসে ৮–১০টি কিশোর গ্যাংয়ের মোট ৩৩ জন সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।
আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা : কিছু কিছু এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি, মারামারি এমনকি হত্যার ঘটনা
ঘটছে জানিয়ে র্যাব–৭ অধিনায়ক বলেন, এগুলোর পেছনে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার। এসব ব্যাপারে র্যাব–৭ চট্টগ্রাম দ্রুত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। মাদক : র্যাব–৭ কর্তৃক মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের ফলে মাদকের বৃহৎ চালান উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে এবং মাদক সরবরাহ অনেক কমে এসেছে। তবে কিছু কিছু খুচরা মাদক কারবারি শহরের নির্জন ও পরিত্যক্ত স্থানে মাদক কেনাবেচা করছে। নগরীর ফিরিঙ্গি বাজার, বাকলিয়া, অলংকার, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ শহরের ভেতরে এবং বাইরে অনেক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা করছে। র্যাব গত ছয় মাসে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার পিস ইয়াবা, ২ হাজার ২০০ কেজি গাঁজাসহ বিপুল পরিমান দেশি– বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে।
ছিনতাই : নগরের মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত ব্যবসা–বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে চলাচল করে। রাত ১১টার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেশি চলে। ছিনতাইকালে ভিকটিম সামান্য বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা ভিকটিমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত এবং অনেক ক্ষেত্রে হত্যার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। র্যাব গত ছয় মাসে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারীকে আটক করেছে।
ইভটিজিং : সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং রাস্তাঘাট, শপিংমলে বিভিন্ন বয়সী নারীদের উত্ত্যক্ত বা ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটছে। র্যাব–৭ ইভটিজিংয়ের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ইভটিজিং প্রতিরোধে রোবাস্ট পেট্রোলিং পরিচালনা করছে। ডাকাতি : ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়ক এবং বাঁশখালী সড়কে ডাকাতি হওয়ায় মহাসড়কে র্যাব নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রোবাস্ট পেট্রোলিং করায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মিনিবাসে ডাকাতির ঘটনা রোধ সম্ভব হয়েছে। গত ছয় মাসে ৬৬ জন ডাকাতকে ৮৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।
চাঁদাবাজি : র্যাব–৭ অধিনায়ক জানান, বর্তমান সময়ে চাঁদাবাজিতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চাঁদাবাজরা সরাসরি চাঁদা নেওয়ার পরিবর্তে তাদের নির্দিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও জনসাধারণকে উচ্চ মূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে বাধ্য করছে। সেটাও আমরা নজরদারিতে নিয়ে আসছি এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গুজব : ইদানীং কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল গুজব সৃষ্টি করে। পরে এই গুজব দেশে নৈরাজ্য ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে। আমরা গুজব সৃষ্টিকারীদের তথ্য নিচ্ছি।