চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল একসময় ঝিল ছিল। সেখানে পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। ১৯৪৫ সালে এই বিল সংস্কার করে আধুনিক চাষাবাদ শুরু করলে এখন পর্যন্ত দুই ফসলী জমি হিসেবে বছরে এই বিল থেকে কোটি টাকার উপরে ধান উৎপাদিত হয়। তবে এবার গুমাই বিলের আরেকটি পরিচয় মিলেছে। সেখানে বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে শত শত মহিষের পাল। আপন মনে বিলের সবুজ ঘাস খেয়ে পেট ভরাচ্ছে মহিষগুলো। বিলের পাশে গাছের ছায়ায় বসে সেগুলোকে পাহারা দিচ্ছে রাখালরা। বিলের স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়ার ব্রহ্মোত্তর অংশে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া চন্দ্রঘোনা ও হোসনাবাদ অংশেও একইভাবে বিলে বিচরণ করতে দেখা গেছে শত শত মহিষের পাল।
কথা হয় আবু বক্কর নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাবছরই গুমাইবিলে মহিষ থাকে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সারাবছর গুমাইবিলে মহিষ রেখে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ওরশ, সভা, সামাজিক অনুষ্ঠানে বিল থেকেই মহিষ কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। কোরবানি উপলক্ষে ভিন্ন আয়োজন থাকে এই বিলের মহিষ বেপারিদের। কয়েক মাস আগে থেকেই মহিষ সংগ্রহ করে লালন–পালন করে কোরবানে বিক্রি করে থাকেন। এরকম কোরবান উপলক্ষে শুধুমাত্র গুমাইবিলের ব্রহ্মোত্তর এলাকায় পাঁচ শতাধিক মহিষ এনেছেন বিক্রেতারা। আবু বক্কর আরও জানান, গুমাইবিলে তিনি নিজেও এবার ৪৪টি মহিষ এনেছেন। ইতিমধ্যেই তিনটি বিক্রি হয়ে গেছে। দূর–দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে মহিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। এছাড়া কোরবানির কয়েকদিন আগে থেকে ব্রহ্মোত্তর রাস্তারমাথা এলাকায় একটি মহিষের বাজার বসে। যেটি উপজেলার একমাত্র বাজার, যেখানে শুধু গুমাইবিলের এই মহিষগুলো বিক্রি হয়।
জানা যায়, কোরবানি পশুর বাজারে বেড়েছে মহিষের কদর। একই ওজনের মহিষের দাম গরুর চেয়ে অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা কম। গরুর চেয়ে দাম কম থাকায় অনেক ক্রেতাই মহিষের দিকে ঝুঁকছেন।
স্বনির্ভর ইউনিয়নের শান্তি নিকতেনের মহিষ বিক্রেতা আবু তৈয়ব জানান, একটি তিন মন ওজনের মহিষের দাম মিনিমাম ৭০–৭৫ হাজার টাকা। তবে এর চাইতে বড় মহিষ কিনলে মন প্রতি ২৫ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।
চন্দ্রঘোনা মহিষ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক সওদাগর জানান, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মহিষ পাইকারিভাবে কিনে নিয়ে আসা হয়। এরপর এদের লালন পালন করে কোরবানে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় গরুর চেয়ে মহিষের কদর বেশি। আগে মহিষ দিয়ে কোরবানি করার প্রবণতা কম থাকলেও এখন নানা রোগবালাইয়ের কথা চিন্তা করে ইদানিং মানুষ মহিষ দিয়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোরবানি দিচ্ছেন।